বর্তমানে সিরিজের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম জনপ্রিয় একটি ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রি। যেভাবে একের পর এক সিরিজ রিলিজ হয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেভাবেই মানুষ তা পছন্দ করে আপন করে নিচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েদের কথা তো বলতেই হয়, তারা কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রির ড্রামার প্রতি খুবই আগ্রহী। ফরেইন ইন্ডাস্ট্রি যারা চিনে তাদের বেশিরভাগই বর্তমানে কোরিয়ান সিরিজ দেখে এবং সেই সাথে খোঁজখবর রাখে। কিছুদিন পর পর পত্রিকায় যাদের নিয়ে প্রায়শই লেখা হয়, পাশাপাশি বিভিন্ন তারকা নিয়ে আড্ডা ও চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ হয় ফেসবুকের নানান গ্রুপগুলোতে।
কোরিয়ানের আর একটা মজার বিষয় হচ্ছে, তারা কোন জনরা ফেলে রাখে না। প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন জনরায় নতুন নতুন সিরিজ তৈরি করে। তবে রোমান্সের দিকে যেন একটু বেশিই ঝুঁকে থাকে। সেজন্যে অনেকে আবার কোরিয়ান সিরিজকে কিছুটা বোরিং মনে করেন। আর সেই দিক বিবেচনা করেই আমি সবার জন্য খাটে এরকম একটা সিরিজ নিয়ে হাজির হয়েছি, যার নাম ভ্যাগাবন্ড। ১৬ এপিসোডের দীর্ঘ এই সিরিজটিতে আপনি বিরক্ত হওয়ার তেমন কোনো চান্স নাই। কেননা৷ প্রতিটি ক্যারেক্টরের মাঝে রহস্যতার মায়াজাল।
মুভিঃ ভাগাবন্ড
ইন্ডাস্ট্রিঃ দক্ষিণ কোরিয়ান
ভাষাঃ কোরিয়ান
দেশঃ দক্ষিণ কোরিয়া
সিজন সংখ্যাঃ ০১
এপিসোড সংখ্যাঃ ১৬
রিলিজ সালঃ (২০১৯- )
আইএমডিবি রেটিংঃ ৮.৩/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৭.৫/১০
পরিচালকঃ ইউ ইন-সিক
কাস্টঃ সেউং-জি লি, সুজি বা, জং-হি মুন
জনরাঃ ক্রাইম, ড্রামা, রোমান্স
এরকম দুর্দান্ত সিরিজের ক্ষেত্রে পরিচালক যেন এক চিমটি ভুলও করতে নারাজ। তাইতো স্টার কাস্টে রাখা হয়েছে তুমুল জনপ্রিয় সব লিড ক্যারেক্টর। “চা ডাল-জিওন” চরিত্রে অভিনয় করেছেন Seung-gi Lee, তাকে যদিও মুভির তুলনায় সিরিজেই বেশি দেখা যায়, কিন্তু তাও মুভি কাস্টে জনপ্রিয় কম না। তার অভিনীত অসংখ্য মুভি ও সিরিজের মধ্যে আমার পছন্দের কয়েকটি হলো- Shining Inheritance, Gu Family Book, Love Forecast (Movie), The King 2 Hearts, My Girlfriend Is a Gumiho (Movie)। অপরদিকে আরেক জনপ্রিয় রোলে অভিনয় করেছেন হাজারও বাঙালির ক্রাশ Suzy Bae, তাকে এত হাইপ দেয়ার আরেকটা কারণ সে প্রচুর ন্যাকামি করতে পারে, যা আবার অনেকের পছন্দ। তার লিস্টেও রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় মুভি সিরিজের তালিকা যার মধ্যে অন্যতম- Architecture 101, Dream High, While You Were Sleeping. এছাড়াও আর একটি গুরুত্বপূর্ণ রোলে অভিনয় করেছেন Jung-hee Moon, যার অভিনয়ের প্রশংসাও না করেও অবশ্য পারা যায় না।
সাধারণ জীবনের তোয়াক্কাহীন এক যুবক, যে কি-না নিজের মতো যাযাবর এদিক-সেদিক ঘুরেফিরে চলাফেরা করে। প্রয়োজনের খাতিরে রপ্ত করে মার্শাল আর্ট। হঠাৎ ঘটনাপ্রবাহে তার পরিবারে যুক্ত হয় এক পিচ্চি, যে সম্পর্কে তার ভাতিজা হয়, যার নাম “চা হুন”। ব্যাচেলর এক অল্পবয়সী যুবকের লাইফে যখন এতবড় মস্তবড় দায়িত্ব এসে পড়ে তখন তো তাকে একটু দায়িত্বশীল হতেই হয়। আর তার জন্য সে একা লড়াই করেনি, চা হুনও নিজের চাচাকে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। ধীরে ধীরে তারা এতটা আপন হয়ে গেছে যে, দূর থেকে কেউ দেখলে নিঃসন্দেহে তারা বলবে যে এরা সম্পর্কে বাবা-ছেলে। মিষ্টি ভারী দুষ্টুমিতে তাদের সংসার বেশ ঠিকঠাক মতোই চলছিল। হঠাৎ চা হুনের ন্যাশনাল ক্লাবের পক্ষ থেকে খেলার উদ্দেশ্যে ডাক পড়ে মরক্কোতে। যেখানে ওর মতো রয়েছে আরও ২১১ জন যাত্রী, তাদের বেশিরভাগই অল্পবয়সী শিশু।
চা হুন যেদিন মরক্কোর উদ্দেশ্যে চলে যাবে সেদিন আবার চাচার সাথে তার একটু মনোমালিন্য হয়, আর সেই রাগের আদলে খুব রেষারেষি আর মন খারাপ নিয়েই যাত্রা শুরু হয় চা হুনের। কিন্তু খানিক বাদেই খবর আসে, বি৩৫৭ অর্থাৎ চা হুনে যে বিমানে ছিল সেটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ খবর শুনে ডাল-জিওনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। তার জীবনের বেঁচে থাকার সবকিছু যে এই বালকটিকে ঘিরেই ছিল। ভাতিজার স্মরণ তার পাঠানো সর্বশেষ কিছু ভিডিও দেখছি ক্লাউড থেকে, যা চা হুন বিমানে ভিডিও করে সরাসরি ক্লাউডে আপলোড করেছিল সাথে সাথে। এতটুকু পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু চা হুনের একটি ভিডিওতে এবং ডাল-জিওনের এয়ারপোর্টে দেখা পাওয়া এক ব্যক্তির মধ্যে মিল দেখে লাগে সব জলপুটলি। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য। যদিও বাকিরা বিশ্বাস করতে নারাজ, কিন্তু ডাল-জিওন শিউর যে বিমান সাধারণ দূর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়নি বরং কেউ এসব পরিকল্পনা মাফিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে করিয়েছে। তার সাথে যোগ দেয় কোরিয়ান ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক কর্মী যার গো-হায়েরী। দু’জনের মিলিত চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত প্রকৃত অপরাধী কি ধরা পড়বে?
কোরিয়ান সিরিজ যারা পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই সিরিজ দেখা নিয়ে কোনো সংশয় থাকার কারণ অবশ্য আমি দেখি না। তবে যারা কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন এবং অতিরিক্ত ঘোরপ্যাঁচ পছন্দ করেন না তারা দু’এক এপিসোড দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর সর্বসাকুল্যে বলব, অসাধারণ থ্রিলিং একটি সিরিজ, সম্পূর্ণ সিরিজে একটুও বিরক্ত হবেন না, উলটো চিন্তিত থাকবেন পল্টিমারগুলো দেখে। আর সাথে দু’জনের খুনসুটিময় রোমান্স তো থাকছেই।
ধন্যবাদ।