২০২০ সালের বহুল প্রশংসিত সিরিজের মধ্যে একটি হলো দ্যা কুইন্স গাম্বিট। একটি অনাথ মেয়ের দাবা খেলার বায়োগ্রাফি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সিরিজটি। অন্যান্য বায়োগ্রাফিক্যাল ড্রামা সিরিজগুলোতে কিছুটা বিরক্তির ছায়া মনে হলেও এই সিরিজে বিন্দুমাত্র বিরক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রথম থেকে শেষ অব্দি মানব জীবনের যে উথান-পতন দেখানো হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয় ছিল। আর সিরিজটির প্রশংসার রত্নকুল এতটাই প্রখর হয়েছে যে টপ রেটেড টিভি সিরিজে খুব সহজেই স্থান করে নিয়েছে।
সিরিজটি পরিচালিত হয়েছে স্কট ফ্র্যাংক এর দ্বারা। তিনি অবশ্য পরিচালকের থেকে লেখনীতে ই বেশি সুপ্রসিদ্ধ। তার রচনায় রয়েছে অসংখ্য মুভি ও সিরিজ। তাছাড়া দেশী-বিদেশী নানান পুরষ্কার সহ নমিনেশন পেয়েছেন স্কট ফ্র্যাংক।
মিনি সিরিজঃ দ্যা কুইন্স গামবিট
ইন্ডাস্ট্রিঃ হলিউড
ভাষাঃ ইংলিশ
দেশঃ ইউএসএ
মোট সিজনঃ ০১
মোট এপিসোডঃ ০৭
প্রতি এপিসোডঃ ৪৬ মিনিট (গড়ে)
আইএমডিবি রেটিংঃ ৮.৮/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৯/১০
ক্রিয়েটরঃ স্কট ফ্র্যাংক, অ্যালান স্কট
কাস্টঃ অনিয়া টেলর-জয়, বিল ক্যাম্প, মিসেস ইনগ্রাম, ইসলা জনস্টোন
জনরাঃ ড্রামা
গ্লোবালি আইএমডিবির টপ র্যাংকিং এ চলে এসেছে #৬৮ তে। তাছাড়া রটেন টমেটোজ-এ ১০০% সহ অন্যান্য ক্রেটিকস রেটিংস সাইট সমূহেও কুড়িয়েছে নন্দিত প্রশংসার ফুলঝুরি। ১৯৮৩ সালের ওয়াল্টার ট্রেভিসের একই নামের প্রশংসিত উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে সিরিজটি। পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন স্কট ফ্র্যাংক এবং তার সহযোগী হিসেবে অ্যালান স্কট। স্কট ফ্র্যাংক অবশ্য বেশ পাকাপোক্তভাবেই মাঠে নেমেছিলেন। তাইতো বিশ্বজয়ী চেস প্লেয়ার গ্যারী কাসপারভকেও মাঠে নামাতে চেয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে। কিন্তু গ্যারি কাসপারভের ব্যস্ততায় তা আর হয়ে উঠেনি, তবে খেলাকে আরও রিয়েলিস্টিক, প্রতিযোগী মূলক করার জন্য গেম প্লেন সাজিয়েছেন নিজ দায়িত্বে। আর পরিচালক স্কট ফ্র্যাংক অবশ্য পরিচালনার চেয়ে লেখনীতে বেশ সুপ্রসিদ্ধ। তার রচনায় রয়েছে অসংখ্য মুভি ও সিরিজ। তাছাড়া দেশী-বিদেশী নানান পুরষ্কার সহ নমিনেশন পেয়েছেন দুইবার অস্কারে। উল্লেখযোগ্য কিছু মুভি- Logan, The Lookout, Out of sight, Godless.
বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের পিতৃ-মাতৃহীন এক অনাথ মেয়ের জীবন কাহিনি দিয়ে শুরু হয় সিরিজের অগ্রযাত্রা। নয় বছর বয়সী মেয়েটি একটি এতিমখানায় বড় হতে থাকে। খুব চুপচাপ, শান্ত মেজাজের, ধীরগতির এই মেয়েটির বন্ধু-বান্ধব বলতে তেমন কেউ নেই। কৃষ্ণাঙ্গ এক মেয়ে (Moses Ingram) এর সাথে যতটুকু প্রয়োজন সাপেক্ষে পরিচিত বলা যায়। আর মোসেস ইনগ্রাম এর অভিনয় তো একেবারে অসাধারণ ছিল। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানেই কিছু উগ্র স্বভাবের পোলাপান থাকে, যাদের অবস্থানটা অভিনয়ে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারলে বেশ চমকপ্রদ হয়। তেমনি এই এতিমখানায় মিস ইনগ্রামের চরিত্রটি ছিল সেরকমই কিছুটা উগ্র স্বভাবের, কারও তোয়াক্কা না করার স্টাইল। অপরদিকে আমাদের প্রধান আকর্ষণীয় চরিত্র বেথ হরমোন চরিত্রে অভিনয় করেছেন Anya Taylor-Joy, একেবারে হালকা গড়নের মেয়েটিকে দেখে রোগাটে মনে হলেও অভিনয়ে খুঁজে পাবেন ব্যতিক্রমী কিছু। যা এনার্জিটিক অভিনয় আর গ্ল্যামার দেখিয়েছে পুরাই থ আমি। বেশিকিছু বলব না, এইটুকুই বলব, তার অভিনয়টি দেখার জন্য হলেও একবার সিরিজের ট্রেলরটি ঘুরে আসুন।
নয় বছর বয়সী অনাথ একটি মেয়ের বাস্তবতা সম্পর্কে কতটুকই বা ধারণা থাকতে পারে, ঘোর অন্ধকার জগৎ নিয়েই বা তার কতটুক অভিজ্ঞতা হতে পারে। সহপাঠীর থেকে টুকিটাকি করে শিখছে এখানকার বিভিন্ন নিয়ম এবং শৃঙ্খলা পদ্ধতি। মায়ের দেয়া পছন্দের একমাত্র কোটটিও সাথে রাখতে পারছে না, পরিধান করতে হচ্ছে তাদের নির্ধারিত পোশাক। এ যেন চেয়েও নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ মিলছে না। তবে পরিবেশ অনুযায়ী বেশ খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করে মেয়েটি। এমনিতে চাপা স্বভাবের হলেও পড়াশোনায় বেশ পটু। ক্লাসের যেকোনো কাজ সবার আগে করে বসে থাকে, তাই ক্লাসের টুকটাক কাজও অবসরে তাকে করতে পাঠানো হয় নিজের বেসমেন্টে। যেখান থেকেই সর্বপ্রথম দেখা মিলে সেখানকার এক কর্মচারীর সাথে।
কিছু বলার সাহস না পেয়ে শুধু দূর থেকে বেশ কিছুদিন দেখে গেমের প্রতি তার বেশ আগ্রহ জমে যায়। অবশেষে সাহস করে নানান প্রতিকূলতা আর শর্ত পেরিয়ে দাবা খেলার অভিষেক হয়। তারপর ধীরে ধীরে নিজের গুরু সহ পার্শ্ববর্তী স্কুলের সেরা খেলোয়াড়দেরকেও কম্বাইন ভাবে হারিয়ে দেয়। কিন্তু একদিন হঠাৎ ধরা খেয়ে দাবা থেকে নিজেকে সরে দাঁড়াতে হয়, কিন্তু নিজের মস্তিষ্কে দাবাকে আপন করে নিয়েছে তার জন্য আবার কীসের নিষেধাজ্ঞা। বেশকিছু বছর পর এক ফ্যামিলি এসে তাকে দত্তক হিসেবে নিয়ে যায়, এবং তার দেখভাল শুরু করে। সেখান থেকেই সে আবারও দাবার উপর নিজের নেশার আসল প্রতিভা দেখাতে শুরু করে। একে একে সবাইকে হারিয়ে যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। কিন্তু পথিমধ্যে দেখা মিলছে তারচেয়েও চমকপ্রদ সব খেলোয়াড়দের। যাদের সাথে মনস্থাত্তিক লড়াইটাই যেন আসল হয়ে দাঁড়ায়। কে জিতবে আর কে হারবে তা অনুমান করা সত্যিই দারুণ। খুব বেশি কিছু বলে স্পয়লার করতে চাই না। তবে দেখে নিতে পারেন, পুরো বিশ্বে একা একটি মেয়ে কতদূর এগিয়ে যেতে পারে।
সাধারণত দাবা অনেক বোরিং গেম হয়, কারণ বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ঠান্ডা মেজাজে খেলতে হয়। যারা খেলে তাদের জন্য ফুর্তি মনে হলেও ভালো খেলা না হলেকিন্তু দর্শকরা খেপে যায়। সেই জায়গা থেকে বিবেচনা করলে একবারও মনে হবে না দাবা কোনো বিরক্তিকর খেলা। পুরো সিরিজ জুড়ে আপনাকে এনে দিবে এক সাইকোলজিক্যাল আত্মতুষ্টি। চাপা রাগ, এগ্রেসিভ মোভমেন্ট, মাতাল বাচনভঙ্গি আর সাধারণ চলাফেরা সিরিজকে নিয়ে গেছে আরও উচ্চতর পর্যায়ে। প্রথম দেখায় যারা এক এপিসোড দেখতে বসবে তারা পরবর্তী এপিসোড দেখতে গিয়ে কোনো সংশয় থাকার প্রশ্নই আসে না।
ধন্যবাদ।