আজকে একটু সামান্য অপরিচিত বা গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরের একটি ইন্ডাস্ট্রির মুভি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। শুধু ইন্ডাস্ট্রিই নয় বরং মুভির কনসেপ্টটাও একেবারে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তাছাড়া থাই ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে ব্যবসা সফল মুভির বিষয়ে কথা উঠলে যে নামটি সবার আগে আসে তা হলো এই ব্যাড জিনিয়াস মুভি। খোদ থাইল্যান্ড সহ বহির্বিশ্বেও আদায় করে নিয়েছে অসংখ্য নান্দনিক প্রশংসা আর সম্মাননা। বিপুল প্রশংসা আর দর্শক চাহিদার জন্য পরবর্তীতে এই মুভির আলোকে তৈরি করা হয়েছে একটি সিরিজও। পুরো মুভিতে যা দেখানো হয়েছে তার সারমর্ম অনেকটা এরকম যে একজন মানুষ তার বুদ্ধিমত্তা কিংবা ট্যালেন্ট এর অপব্যবহার কীভাবে করা যায়। যেহেতু বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সমাজের অসাধারণ কিছু সুফলতা বয়ে আনা যায়, তেমনি বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারে কিন্তু নান্দনিক কিছু কুফলও বয়ে আনা যায়। এবং যার প্রভাব আমাদের ব্যক্তিজীবনে হার হামেশাই পরোক্ষভাবে পড়তে পারে।
মুভিটি পরিচালনা করেছেন বিখ্যাত থাই পরিচালক Nattawut Poonpiriya. যার নামের পাশে ব্যাড জিনিয়াস সহ আরও বেশ কয়েকটি সফল সিনেমার সংযুক্ততা রয়েছে। উল্লেখ্য কয়েকটি মুভি হলো- Countdown, The Library, The lost hour, Present Perfect
মুভিঃ ব্যাড জিনিয়াস
ইন্ডাস্ট্রিঃ থাই
ভাষাঃ থাই
দেশঃ থাইল্যান্ড
রানটাইমঃ ১৩০ মিনিট
রিলিজ সালঃ ২০১৭
আইএমডিবি রেটিংঃ ৭.৬/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৮.৫/১০
পরিচালকঃ নাত্তাওয়ুত পুণপিরিয়া
কাস্টঃ ছুচিমন চুয়েন জি চারোইন স্কিইং জি, আইসায়া হোসওয়ান, টেরাদন স্পাপুনপিনিও
জনরাঃ কমেডি, ক্রাইম, ড্রামা
কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন থাই ইন্ডাস্ট্রির বিখ্যাত এবং আলোচিত নায়িকা Chutimon Chuengcharoensukying. বিশাল লম্বা, হালকা-পাতলা এই মেয়েটিকে প্রথম দৃষ্টিতে হয়তো আপনার ঠিক সেভাবে পছন্দ না-ও হতে পারে। কিন্তু এইটুকু বলে দিচ্ছি, তার অভিনয় দেখার পর আর তার চেহারা নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না। একেবারে নিজস্ব ক্যারেক্টরে মিশে যা ধামাকা ফাটিয়েছে তার প্রশংসা না করে উপায় নেই। ইন্ডাস্ট্রিতে সফলতার সাথে একে-একে উপহার দিয়েছে অসংখ্য খ্যাতিমান মুভি। যার মধ্যে অন্যতম হলো- Happy Old Year, Die Tomorrow, Sleepless Society: Insomnia (Series).
স্কুল লাইফে নকলের জন্য বকা খায়নি এরকম স্টুডেন্ট খুব কমই পাওয়া যাবে। হয়তো কেউ বকা খেয়েছে অন্যের থেকে দেখে লেখার জন্য আবার কেউ হয়তো-বা অন্যকে দেখানোর জন্য। স্ট্যান্ডার্ড রুলসে দুইটাই সমান অপরাধ। পরীক্ষার হলে কারও থেকে কিছু দেখাও যাবে না, আবার কাউকে দেখানোও যাবে না। আমি বলছি না যে, সবাই লাইফে নকল করেছে, কিছু ফার্স্ট বেঞ্চার স্টুডেন্ট তো থাকেই, যারা আপনার থেকে দেখবেও না, আবার দেখাবেও না। ওদের প্রতি আমাদের মতো ব্যাক বেঞ্চাররা সবসময়ই ক্ষেপা থাকি। কেউ কেউ তো আবার এভাবে হুমকি দিয়ে ফেলে, “দেখাবি না তো? পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে শুধু বের হ, তারপর মজা টের পাবি।” মানে একজন আরেকজনকে দেখাতে হবে এটাই যেন বন্ধুবান্ধবদের প্রধান রুলস।
তো আজকে আলোচনা করছি সেরকমই একটা মুভি নিয়ে, যেখানে আমাদের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন লি (Chutimon Chuengcharoensukying)। অস্বচ্ছল এবং গরীব ঘরের সন্তান হওয়া স্বত্বেও তার প্রতিভা কিংবা মেধার কোনো কমতি ছিল না। বাবা একজন সাধারণ স্কুল শিক্ষক, যা আয় করে তা দিয়ে কোনোরকমে দু’জনের টানাপোড়েনের সংসার চলে যায়, কিন্তু সেখানে উন্নত কিংবা দেশের সেরা স্কুলের কথা চিন্তা করা যেন আকাশ-কুসুম হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কথায় আছে না, আপনি মেধা নিয়ে এগিয়ে যান, আপনাকে সম্মান বা বরণ করার মতো কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক সেভাবেই দেশসেরা স্কুলের কর্ণধার তার এই অসাধারণ প্রতিভা দেখে তাকে ফুল স্কলারশিপে স্কুলে ভর্তি করাতে রাজি হয়। সেই থেকে লি এর হাইস্কুলে পথচলা শুরু। সেখানে পরিচিত হয় এক ফ্রেন্ডের সাথে। যে কি-না পড়াশোনায় বেশ পিছিয়ে। বছর পেরিয়ে বিভিন্ন টার্মিনাল পরীক্ষায় এখন যেন পাশ করাটা তার কাছে বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু করবে কীভাবে, ছাত্রী হিসেবে তো সে খুবই দূর্বল।
এদিকে লি এর মেধা এতটাই প্রখর যে সে কোনোকিছু একবার আয়ত্ত করে নিলে তা সহজে ভুলানোর সাধ্য কারও নেই। বান্ধবীকে সহযোগিতা এবং পাশ করানোর জন্য বের করে অভিনব এক নকল পদ্ধতি যা স্কুল শিক্ষকদের ধারণারও অনেক ঊর্ধ্বে। ঘটনা এখানে শেষ হলেও পারতো, কিন্তু লোভ কী আর মানুষকে সহজে ছাড়তে পারে, এসব চুরা টেকনিকের জন্য লি পাচ্ছে বিশাল অঙ্কের সব প্রাইজ এমাউন্ট, তাই এই ঘটনা পর্যায়ক্রমে বাড়তেই থাকে। এবং একটা পর্যায়ে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে চলে যায়। SAT পরীক্ষার মতো ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের পরীক্ষায়ও সে জালিয়াতির জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কি সে সফল হতে পারবে? আর কী-বা তার পরিণতি হবে! জানতে হলে দেখে ফেলুন অসাধারণ এই মাস্টারপিস মুভিটি।
এরকম মুভির ক্ষেত্রে আলাদাভাবে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করি না, কারণ কনসেপ্টটাই যে অসাধারণ। তাও বলে রাখি, সম্পূর্ণ মুভিটি আপনার কাছে একটু সামান্যতম বোরিংও মনে হবে না। উলটো চিন্তায় থাকবেন, এই বুঝি ধরা খেয়ে গেল।
আর হ্যাঁ মুভিটাকে কোনো ক্যাটাগরির জন্য নির্দিষ্ট না বলে সবার জন্যই মাস্টওয়াচ বলব।
This website uses cookies.