দ্য সোশ্যাল ডিলেমা (The Social Dilemma) – ২০২০ মুভি রিভিউ (ভিন্নধর্মী এক মুভি)

Bangla Subtitleফেব্রুয়ারি 4, 2022

আজকের আলোচনায় থাকছে ভিন্নধর্মী এক মুভি, যেখানে থাকছে না কোনো মারমার কাটকাট অ্যাকশন কিংবা হাস্যরসাত্মক উদ্ভট কিছু। যতক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখবেন, ঠিক ততক্ষণই মনোযোগ এবং ভাবশক্তি সম্পূর্ণ ব্যয় হবে মুভিতে উচ্চারিত প্রতিটি বাক্যকে ঘিরে। কারণ প্রতিটা লাইন যেন একেকটা শিক্ষণীয় কারুকার্য। বলছিলাম ২০২০ সালের অন্যতম আলোচিত এবং প্রশংসিত আমেরিকান ডকু-ড্রামা মুভি “The Social Dilema” নিয়ে। অসাধারণ এই মুভিটি রিলিজের পরই দর্শকমহলে ব্যপক হৈচৈ ফেলে দেয়, অনেকে আবার কানাখোঁড়াও শুরু করে মুভির সমালোচনা নিয়ে। কারও কারও মতে, এই মুভির মাধ্যমে আমাদের বর্তমান ইন্টারনেট নির্ভর সমাজের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে, আবার অনেকের মতে, সবকিছুই নেটফ্লিক্সের কারসাজি। তবে আমি প্রথম অংশের সাথে একমত পোষণ করি।

দ্য সোশ্যাল ডিলেমা মুভিটির ইনফো

আমরা যে হারে ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, তাতে শুধু আমাদের ডিভাইস আর আঙুলই কাজ করে না, বরং সমস্ত দেহ, আবেগ, ইচ্ছা সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ইন্টারনেট দিয়ে। আরও সহজ করে বললে, আমাদের সোশ্যাল মাধ্যমেগুলোতে আমাদের রচিত প্রতিটি পদক্ষেপে কেউ না কেউ নজর রাখছে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে।

মুভিঃ দ্য সোশ্যাল ডিলেমা
ইন্ডাস্ট্রিঃ হলিউড
ভাষাঃ ইংলিশ
দেশঃ ইউএসএ
রানটাইমঃ ৯৪ মিনিট
রিলিজ সালঃ ২০২০
আইএমডিবি রেটিংঃ ৭.৭/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৯/১০
পরিচালকঃ জেফ অরলোস্কি
কাস্টঃ ত্রিস্তান হ্যারিস, আজা রাসকিন, জাস্টিন রোজস্টেইন, শোনা জুবফ
জনরাঃ ডকুমেন্টারি, ড্রামা

পরিচালনা নিয়ে কিছু কথা

অন্যান্য মুভিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র নিয়ে আলাদাভাবে বললেও এখানে বিশেষভাবে বলার তেমন প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ এটি একটি সম্পূর্ণ ডকুমেন্টারি মুভি, আর ডকুমেন্টারি মুভিগুলোতে চরিত্রের চেয়ে শাব্দিকতায় বেশি জোর দেয়া হয় এবং তা গুরুত্ববহও হয়। তবে মুভিটির পরিচালনার প্রশংসা বিশেষভাবে কর‍তেই হয়, আর এ অংশে ছিলেন Jeff Orlowski. তার রচনায় আরও কয়েকটি বিখ্যাত বায়োগ্রাফি মুভির দেখাও পাওয়া যায়, যার মধ্যে অন্যতম হলো- Chasing Coral, Chasing Ice, শুধু পরিচালনা নয়, ওনার পদচিহ্ন রয়েছে আরও অসংখ্য ক্ষেত্রেই, তার মধ্যে বিশেষ নজীর সৃষ্টি করেছেন প্রডিউসার, ক্যামেরা, অভিনেতা, এবং সিনেমাটোগ্রাফিতেও। Jeff Orlowski রচিত এই মুভিটির রাইটিং পার্টেও উনি সহ ছিলেন আরও কয়েকজন নামীদামী ব্যক্তিবর্গ- Davis Coombe, Vickie Curtis.

 

তারপরও যাদের উপস্থাপন করা হয়েছে বা যাদের চরিত্র খন্ডন করে আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়েছে তাদের নামগুলো উল্লেখ করে দিচ্ছি- Tristan Harris, Aza, Raskin, Justin Rosenstein, Shoshana Zuboff, Jaron Lanier, Skyler Gisondo, Kara Hayward, Vincent Kartheiser, Anna Lembke.

মূল প্লট নিয়ে সার্বিক আলোচনা

মানব জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ জুড়ে রয়েছে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া। যার অবদানে আমরা দেশ-বিদেশে যোগাযোগ করতে পারছি, সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছি খুব কাছে থেকে। দূরে থেকেও যেন মনে হয়, এইতো বুঝি পাশে এসে বসে গেল সে। আর এখানে যার নামটা সবার আগে আসে তা হচ্ছে ফেসবুক। আধুনিক সমাজের কেউ ফেসবুক চালায় না বা ফেসবুকে একাউন্ট নেই এরকম জীবন্ত মানব পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যকই খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা যে তাদের এত এত সুন্দর ফিচারগুলো আরামসে ভোগ করছি, এতে তাদের লাভটা কোথায়? শুধু শুধু ফ্রি-তে আমাদের এতকিছু দিচ্ছে এতে আদৌও কি তাদের কোনো লাভ হচ্ছে? উত্তরটা সবাই জানি যে ফ্রি-তে কেউ কাউকে কিছু দেয় না, কিন্তু তাদের ইনকামটা কীভাবে হয় তা হয়তো আমাদের অজানা। তেমনি যতগুলো সোশ্যাল মিডিয়া বা মাধ্যম রয়েছে সবারই অন্তর্নিহিত কিছু উদ্দেশ্য বা লাভ রয়েছে। যা আমাদের অজান্তেই তারা হাতিয়ে নিচ্ছে।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, আপনি গুগুলে কিংবা ফেসবুকে যে-ই কোনো পণ্য নিয়ে সার্চ দিলেন, খানিক বাদে আপনার প্রোফাইলে বা সকল সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই পণ্য নিয়েই এড দিয়ে যাচ্ছে। তাহলে প্রশ্নটা হলো, তারা জানলো কীভাবে? অবশ্যই তাদের মাঝে কোনো সংযোগ রয়েছে। শুধু এখানেই নয়, আমাদের চলাফেরা, মনসংক্রান্ত, আবেগ, অনুভূতি, স্বভাব চরিত্রের অনেকাংশই এখন নিয়ন্ত্রণ করে এইসব সোশ্যাল মিডিয়া। মুভির একটা অংশে একটু তরুণকে দেখানো হয়, যেখানে বাস্তবিক জীবনে খানিকটা পরাস্ত হয়ে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জড়িয়ে পড়ে, আর তারপর থেকে নানা অনাচার, অপরাধ কিংবা অনিয়ন্ত্রিত রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে।

 

তাই আমি আরও একবার বলছি এরকম হাজারও অজানা তথ্য জানার জন্য এই মুভির কোনো বিকল্প নেই। কারণ এখানে আপনি উপস্থাপক কিংবা কথক হিসেবে পাবেন, খোদ সোশ্যাল মিডিয়ার নিজস্ব প্রাক্তন কর্মীদের। যারা আপনার কাছে তাদের অভিজ্ঞতা এবং কার্যাদি উপস্থাপন করে দিবে খুব সহজেই।

ব্যক্তিগত অভিমত

এরকম মাস্টারপিস মুভির ক্ষেত্রে মন্তব্য একটাই, যাস্ট একবার দেখুন, তারপর বুঝতে পারবেন। আর হ্যাঁ প্রস্তুত হয়ে নিবেন, কারণ আপনিও আমার মতো মুভি শেষ করার পর দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। যা ইতোমধ্যে তারা তাদের টাইটেলে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। “দ্যা সোশ্যাল ডিলেমা” যেখানে ডিলেমা দিয়ে দ্বৈততা বুঝানো হয়েছে। এসব জানার পর আপনি কি আসলেই সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমিয়ে দিবেন? নাকি জেনেশুনেও আগের মতো স্বপথে চলতে থাকবেন?
বিশেষ একটা লাইন রয়েছে আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।

“If You Are Not Paying for the Product, You Are the Product!”

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published