আঞ্জাম পাথিরা (Anjaam Pathiraa) ২০২০ মুভি রিভিউ (বহুল আলোচিত এ বছরের অন্যতম সেরা মালয়ালম ক্রাইম থ্রিলার মুভি)

Bangla Subtitleফেব্রুয়ারি 17, 2022

বহুল আলোচিত রাতসাসান মুভির কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। অনেকদিন পর বছরের অন্যতম সেরা মালয়ালম সিরিয়াল কিলিং মুভি দেখতে পেলাম যা রাতসাসানের মতো না হলেও বেশ ভালো লেগেছে। অনেকের কাছে স্বাদের পরিবর্তন মনে হতে পারে, কিন্তু আমি তুলনা নয় কেবল ভালো লাগা থেকে উদাহরণ হিসেবে রাতসাসানের কথা উল্লেখ করেছি। মুভিটি পরিচালনা করেছেন Midhun Manuel Thomas, যার পরিচালনার অন্য আরেকটি মুভি Ohm Shanthi Oshaana যা ২০১৪ সালে রোমান্টিক জনরায় অন্যতম সেরা এবং সফল মুভি ছি ল। একজন চঞ্চল স্কুল ছাত্রীর প্রথম নিয়ে গড়া সেই মুভির স্মৃতি প্রায় মনে করিয়ে দেয় Midhun Manuel Thomas এর মতো গুণী পরিচালকদের।

আঞ্জাম পাথিরা মুভিটির ইনফো

মিডন ম্যানুয়েল থমাস পরিচালিত এই মুভিটি দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এরকম থ্রিল সম্পূর্ন মুভি রাতসাসন এর পরে আবারও আমাদের মাঝে সেই কৌতুহল পূর্ন মুভি হচ্ছে আঞ্জাম পাথিরা। এই মুভিটির ব্যাজেট নিয়ে আমরা সঠিক ভাবে কোন কিছু পাই নাই, তবে যতটুকু তথ্য এখন পর্যন্ত আমরা পেরেছি তা এখানে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

মুভিঃ আঞ্জাম পাথিরা
ইন্ডাস্ট্রিঃ মালায়ালাম
ভাষাঃ মালায়ালাম
দেশঃ ভারত
রানটাইমঃ ১৪৪ মিনিট
রিলিজ সালঃ ২০২০
আইএমডিবি রেটিংঃ ৭.৫/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৮/১০
পরিচালকঃ মিডন ম্যানুয়েল থমাস
কাস্টঃ কুনচাকো বোবান, উনিমায়া প্রসাদ
জনরাঃ ক্রাইম, মিস্ট্রি, থ্রিলার

আঞ্জাম পাথিরা মুভির প্রধান চরিত্র

আমরা সাধারণত সাইকো-থ্রিলার মুভিগুলোতে অপরাধীর পিছু ছুটতে থাকা পুলিশদের কর্মকাণ্ড দেখতে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকি। কিন্তু আজকের মুভিতে থাকছে একেবারে ভিন্ন ঘটনা, এবার যে পুলিশেরও রক্ষা নেই। কিলার যেন বেছে বেছে পুলিশকেই উঠিয়ে নিয়ে গুম করে দিচ্ছে। যেখানে খোদ পুলিশ নিজেই দিশেহারা সেখানে তাদের অবস্থা নিঃসন্দেহে নাজেহাল তা বুঝায় যাচ্ছে। আর সেই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে খবর দেয়া হয় এসিপি অনিল মাধাবনের ফ্রেন্ড সাইকোলজিস্ট আনোয়ার হোসেনকে। মুভিতে বিভিন্ন চরিত্র থাকলেও আমার কাছে আনোয়ার হোসেনের ঠান্ডা মেজাজের অভিনয় বেশ ভালো লেগেছে। আর এই আনোয়ার হোসেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন Kunchacko Boban. এছাড়াও আরেকজনের অভিনয় চোখে পড়ার মতো ছিল, সে হচ্ছে ডিসিপি ক্যাথরিন, যেখানে অভিনয় করেছে Unnimaya Prasad. আর যার কথা না বললেই নয়, তিনি হচ্ছে বেনজামিন লুইস, যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন Sharaf U Dheen, খুবই স্মার্ট এবং প্রখর ডিরেকশনে অসাধারণ কিছু স্টাইল তিনি উপহার দিয়েছেন যা সাইকো-থ্রিলার মুভিতে বেশ কার্যকরী।

আঞ্জাম পাথিরা মুভি নিয়ে সার্বিকভাবে কিছু আলোচনা

আচমকা একজন পুলিশ সদস্য উধাও, তাও কোনোরকম আভাস বা ধারণা ছাড়া। আর মজার বিষয়, অন্যান্য মুভিতে বিপরীত ঘটনা ঘটলেও এখানে দেখা যাচ্ছে খোদ পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই উধাও।

 

যেখানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখে জনগণকে রক্ষা করবে, সেখানে তাদের নিজেদের রক্ষা করাটাই হুমকিস্বরূপ। ঘটনা এখানে শেষ হলেও মানা যেত, কিন্তু না, সেই লাশের আবার চোখ উগরে ফেলা হয়েছে এবং তার হৃদপিণ্ড বিকৃত করে দেয়া হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে দায়িত্ব দেয়া হয় ডিসিপি ক্যাথরিনকে। লাশের ময়নাতদন্ত করার পর বেরিয়ে আসে আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য, রোগীর দেহে একধরনের মেডিসিনের উপস্থিতি ছিল। প্রথম খুনের আলামতের সঠিক সংগ্রহের কাজ হতে না হতেই এদিকে আরেক খবর এসে হাজির যে, আরেকজন অফিসার নিখোঁজ এবং তার লাশটাও তাদের আশেপাশেই কোথাও রাখা। এদিকে সহযোগী পরামর্শক হিসেবে দায়িত্বরত আনোয়ার হোসেনের অবস্থা নাজেহাল।

ঘরে রাখা বিবাহিত স্ত্রীর প্রতি সেভাবে সময় দেয়ারও সুযোগ হয়ে উঠছে না তার। লাগাতার পরিশ্রম করে লাশ খুঁজে পাওয়ার পর বুঝতে পারে হয়তো সিসিটিভি ক্যামেরায় খুনির কোনো আলামত খুঁজে পাবে, কিন্তু এখানেও সবাইকে অবাক করে দেয় খুনি। এত সিকিউরিটি থাকা স্বত্বেও সিসিটিভি ফুটেজ হ্যাকড হয়ে গেছে। তখন আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, খুনি একইসাথে একজন হ্যাকার। সেই হিসাবে খুনিকে ধরতে এলে নিযুক্ত করতে হবে তার সমমাপন্ন কোনো হ্যাকারকে। যার সহযোগিতা এবং সকলের প্রচেষ্টায় খুনিএ ছোট্ট একটা ভুল থেকে ক্লু নিয়ে সবাই সামনে এগিয়ে যায়। আর ঠিক তারপরেই ঘটে উল্টো ঘটনা এবং গল্পের মোড় নেয় খুনির ছেলেবেলার জীবনীতে, যেখানে অন্যায়, অবিচার আর অবহেলার শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে সে একজন সিলেক্টেড কিলার হয়ে যায়। তাহলে কী ছিল তার সেই অতীত? কেন-ই বা তাদের খুন করে যাচ্ছে একের পর এক? জানতে হলে চটজলদি দেখে ফেলুন অসাধারণ এই থ্রিলার মুভিটি।

ব্যক্তিগত অভিমত

অন্যান্য মুভিতে খুনির প্রতিশোধের অংশটা কিছু হাস্যরসাত্মক মনে হলেও এখানে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। কারণ যথেষ্ট অবিচার আর অন্যায়ের শিকার হয়েই সে বাধ্য হয়ে এরকম সিচুয়সশনের সম্মুখীন হতে। আর নিজেকে একজন প্রসিদ্ধ যোগ্য মানুষ গড়ে তোলার পর ছেলেবেলার হিংস্রতা টেনে নিয়ে আসাটাও ছিল কিছুটা মুভির সাথে যুতসই। তাছাড়া মুভিতে নায়িকার সিন বলতে তেমন কিছুই ছিল না, একটু বাড়তি স্ক্রিনটাইম দিলে হয়তো আরও উপভোগ্য হতো। তাও আমি বলব, এবছরের আলোচিত এই মুভিটি সাইকো-থ্রিলার প্রেমি হয়ে থাকলে একবার দেখে নিতে পারেন।

ধন্যবাদ।

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published