মুভি

ট্রান্স (Trance) – ২০২০ মুভি রিভিউ (অসাধারণ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভি)

ব্যর্থতার আদলে হারিয়ে গেছে অসংখ্য পরিপাটি মানবজীবন। যারা নিজের পরাজয় আর অতিমানবিক পরিশ্রমকে সহ্য করতে না পেরে চুপটি করে সরে গেছে। আর যারা এটা মেনে নিতে পারেনি, তারা ব্যার্থতাকে সঙ্গী করে বিদায় নিয়েছে এই সুন্দর পৃথিবী থেকে। আর এর জন্য নিঃসন্দেহে কেউ না কেউ দায়ী। হতে পারে আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা কিংবা বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়িকদের গুপ্তচাল। আজকে থাকছে সেরকমই একটি অসাধারণ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভি।

ট্রান্স মুভি ইনফো

ট্রান্স মুভিটি পরিচালনা করেছেন মালয়ালাম ইন্ডাস্ট্রি খ্যাত পরিচালক আনোয়ার রাশেদ। যিনি একাধারে স্ক্রিপ্ট রাইটার, প্রডিউসার এবং একজন সুনামধন্য পরিচালক। তার পরিচালনার আরেক সেরা মুভি Ustad Hotel এবং প্রডিউসার হিসেবে ছিলেন Premam এবং Bangalore Days এর মতো নামকরা মুভিতে।

মুভিঃ ট্রান্স
ইন্ডাস্ট্রিঃ মালায়লাম
ভাষাঃ মালায়লাম
দেশঃ ভারত
রানটাইমঃ ১৭০ মিনিট
রিলিজ সালঃ ২০২০
আইএমডিবি রেটিংঃ ৭.৩/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৭.৫/১০
পরিচালকঃ আনোয়ার রাশেদ
কাস্টঃ ফাহাদ ফাসিল, নাজরিয়া নাজিম, গৌতম মেনন
জনরাঃ ড্রামা, থ্রিলার, সাইকোলজিক্যাল

মুভিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র

মুভির প্রধান চরিত্রে দেখা মিলবে ভিজু প্রসাদ নামে ফাহাদ ফাসিলের। তার অভিনয়ে আমি বরাবরের মতোই মুগ্ধ। সাউথ ইন্ডিয়ান কিংবা মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির কথা বলেন, সবখানেই তাকে সবাই এক নামে চিনে। অসাধারণ তার সুনিপুণ অভিনয়ে আপনি থ হয়ে যাবেন। বিখ্যাত কিছু মুভি Kumbalangi Nights, Bangalore Days, Super Deluxe, Take Off, প্রায় সবগুলো মুভিই করেছেন ভিন্নমাত্রার গল্প নিয়ে। আর তার বিপরীতে দেখা যাবে এস্তার লোপেজ নামে নাজরিয়া নাজিমকে। কী নেই এই মেয়ের মাঝে? অসাধারণ অভিনয়, অপলক তাকিয়ে থাকার মতো মায়াবী চেহারা, এক কথায় পার্ফেক্ট বলা যায়। সাউথ ইন্ডিয়ানদের মধ্যে আমার অনেক পছন্দের একজন অভিনেত্রী। আর একটা কথা বলতেই হয়, ব্যক্তিগত জীবনে ফাহাদ ফাসিল এবং নাজরিয়া নাজিম স্বামী-স্ত্রী।

মুভিটি নিয়ে সার্বিক আলোচনা

বর্তমানে মোটিভেশনাল স্পিকারদের আনাগোনা বেশ ভালো পরিমাণে দেখা যায়, যারা অন্যের জীবনের মূল লক্ষ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে কীভাবে সফল হওয়া যায়, সেই সম্পর্কে অনুপ্রেরণা জোগায়। আমাদের আজকের মুভিতে সেরকমই একজনকে প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে, যার নাম ভিজু প্রসাদ (Fahadh Faasil)। পাশাপাশি সে একটি রেস্টুরেন্টে পার্টটাইম জব করে। যেহেতু তার নেই কোনও সুবিশাল নামি-দামি ব্যাকগ্রাউন্ড, তাই যা করার নিজে থেকেই করতে হয়। টিভিতে বিজ্ঞাপন, পোস্টার ছাপানো সহ নানান প্রচারণায় নেই কোনো কমতি। ছোটখাটো যা কাজ আসে তাতেই চলে যায় তার ছোট্ট এই সংসার, যেখানে রয়েছে সে ছাড়াও মানসিক ভারসাম্যহীন এক ছোট ভাই।

অল্প বয়সেই বাবা-মা হারা ভিজু প্রসাদ তার ছোট ভাইকে আগলে রেখেছে সবসময়। শত বাধা-বিপত্তিতেও হাল ছেড়ে দেয়নি, চেষ্টা করেছে নতুন করে হাঁটতে শেখাতে। কিন্তু প্রকৃতির কাছে হার মেনে সেও বাবা-মায়ের মতো আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এই বীভৎস প্রাতিকূল্যতায় ভিজু প্রসাদের যে এই দুনিয়ায় আর কেউ রইলো না, এমনকি একমাত্র ভাইটিকেও বাঁচাতে পারলো না। হতাশা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল, চারদিক যেন অন্ধকার হয়ে এসেছে তার জীবনে। কিন্তু যে হাজারো মানুষকে দুঃসময়ে হাল ধরতে শিখিয়েছে সে কীভাবে এত দ্রুত হাল ছেড়ে দিতে পারে?

Related Post

জীবনের তাগিদে ছুটে যায় মুম্বাই শহরে। অচেনা পরিবেশে দেখা মিলে পূর্বপরিচিত “কবিতা” নামে এক মেয়ের সাথে। তারই জের ধরে সে এগিয়ে যায় এক সুনামধন্য ব্যবসায়িকের খপ্পরে। তাদের দরকার একজন যাজক যে কি-না ধর্মের নাম করে মানুষের উপর বিশ্বস্ততা অর্জন করবে, আর সেই বিশ্বস্ততায় লুফিয়ে নিবে কোটি কোটি টাকা। জীবনে বেঁচে উঠার লড়াইয়ে ভিজু প্রসাদ সাতপাঁচ না ভেবে সমর্থন দিয়ে দেয় তাদের প্রস্তাবে। তিলে তিলে গড়ে উঠতে থাকে ধর্মের নামে ব্যবসা, যেখানে সাধারণ অসুস্থ মানুষকে ধোঁকা দেয়াটা তাদের কাছে খেলনার পুতুল হয়ে দাঁড়ায়। আর সাধারণ ভিজু প্রসাদ থেকে সে হয়ে যায় বিশ্ববিখ্যাত জশোয়া কার্ল্টন।

খানিক পরে, কিছুটা অপ্রস্তুতভাবেই আগমন ঘটে এস্তার লোপেজ (নাজরিয়া নাজিম) এর। ভিজু প্রসাদের দেখাশুনো করার জন্য তাকে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে রাখা হয়। তার অভিনয়, স্টাইল একেবারে বাকরুদ্ধ করার মতো ছিল। সেই হযবরল অবস্থা থেকে সে কি পারবে একজন ভন্ড ধর্ম যাজক থেকে তাকে স্বাভাবিক ভিজু প্রসাদে পরিণত করতে? আদৌও কি ধরা পড়বে সেই মুখোশধারী ব্যবসায়ীরা?

 

 

মুভিটি নিয়ে ব্যক্তিগত অভিমত

মুভির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল আমার কাছে নিজেকে নিজে উৎসাহিত করা। যখন কেউ পাশে থাকবে না, তখন নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য লড়াইটা একাই করে যেতে হবে। নিজের উদ্যম আর অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দুই হাত দিয়ে নিঃশব্দে হাততালি দেয়ার সিনগুলো সত্যিই মারাত্মক অনুভূতি এনে দিয়েছে আমাকে। যদিও পূর্বে ফাহাদ ফাসিলের অভিনয় সম্পর্কে ধারণা আছে, তাও এই মুভি দেখার পর নিঃসন্দেহে যেকেউ তার অভিনয়ের ভক্ত হয়ে যাবে। কারণ একবারও মনে হয়নি যে এটা ফাহাদ ফাসিল, পুরো কাহিনি জুড়ে আমি শুধু ভিজু প্রসাদকেই দেখতে পেয়েছি।

জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইলে, ব্যার্থতাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে এবং যারা পারিবারিকভাবে ব্যহত, তাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটা মাস্টওয়াচ শিক্ষণীয় মুভি বলা যায়।

This website uses cookies.