হলিউডের ব্যতিক্রমধর্মী কিছু মুভি আছে যা একবার দেখার পর আপনার নিজের চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করবে। কারণ হয় আপনি কাহিনির আগাগোড়া ধরতে পারবেন না, আর না হয় মুগ্ধতায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাবেন। তো আজকের রিভিউতে থাকছে স্বনামধন্য পরিচালক Martin Scorsese এর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার জনরার অসাধারণ একটি মুভি Shutter Island নিয়ে। পরিচালকের বিষয়ে বলতে গেলে The Departed, The Irishman এর মতো জগৎবিখ্যাত অসংখ্য মুভি রয়েছে তার ঝুলিতে এবং এনে দিয়েছেন অস্কার সহ বিভিন্ন ধরনের উচ্চপর্যায়ের পুরস্কার।
মুভিটি মূলত Dennis Lehane রচিত প্রশংসিত বই Shutter Island এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। পরিচালক এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে মুক্তির সময়েই উনি বলে দিয়েছিলেন এই মুভিতে পর্যাপ্ত আয় হবে, কেননা এই মুভি মানুষ সিনেমা হলে একাধিকবার অবশ্যই দেখতে আসবে। প্রথমবার দেখার জন্য আর দ্বিতীয়বার বুঝার জন্য।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, একাধিকবার না দেখলে এই মুভি মাথায় ধরবে না।
মুভিঃ শাটার আইসল্যান্ড
ইন্ডাস্ট্রিঃ হলিউড
ভাষাঃ ইংলিশ
দেশঃ আমেরিকা
রানটাইমঃ ১৩৯ মিনিট
রিলিজ সালঃ ২০১০
আইএমডিবি রেটিংঃ ৮.২/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৮.৫/১০
পরিচালকঃ মার্টিন স্করসেজি
কাস্টঃ লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, মার্ক রুফালো, বেন কিংসলে
জনরাঃ মিস্ট্রি মুভি, থ্রিলার মুভি, ফিজিক্যালি
সমুদ্রের মধ্যদেশ ভেদ করে এক ফেরি চলছে তার আপন ঠিকানায়, লক্ষ্য অন্য কোথাও না, অদূরেই একটি দ্বীপে, যার নাম শাটার আইসল্যান্ড। যেখানে রয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য একটি সুবিশাল হাসপাতাল। যাদের সাধারণ পরিবেশে কিংবা সাধারণ হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না তাদের জন্য গঠন করা হয়েছে এই পরিকল্পিত হাসপাতাল। সহজভাবে বললে এরা পাগল এবং অপরাধী, অর্থাৎ অপরাধী পাগল। অজানা এক কারণে, অদ্ভুত এবং রহস্যের বেড়াজালে নিখোঁজ হয়ে যায় এক রোগী যার নাম র্যাচেল। সেই রোগীর তদন্ত করতে পাঠানো হয় আমেরিকান আর্মির দু’জন মার্শালকে যাদের নাম টেডি (লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও) এবং চাক (মার্ক রাফেলো)। হলিউডের সাথে যারা পরিচিত তাদের লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও-র অভিনয় নিয়ে কোনো সংশয় থাকার সুযোগ নেই। কারণ তার অভিনয়ে মিশে আছে অনবদ্য এক জাদুর ছোঁয়া।
মেঘলা আকাশ, উত্তাল ঢেউ আর মৃদু বাতাস বলে দিচ্ছে খুব বড়সড় ঝড় হতে চলেছে। তাই ক্যাপ্টেন, টেডি এবং চাককে বলে দিলেন যেন তারা একটু ঝটপট করে নেয়। কারণ এই দ্বীপে সচরাচর কোনও ফেরি আসতে দেখা যায় না। যদি আসে তবে সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে। এদিকে টেডির আবার গভীর সমুদ্র ভ্রমণে সমস্যা আছে, প্রায়শই বমি বমি হয়। দুঃখজনক হলেও সেই উদ্ভট পরিস্থিতিতেই তার পার্টনার চাক-এর সাথে আজ নতুন পরিচয় হয়। ফেরি থেকে নেমে দু’জন ডজনখানেক প্রহরীর সাথে করে উপস্থিত হয় সেই মেন্টাল হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে মোট ৩ টি ওয়ার্ড রয়েছে। একটি পুরুষ ওয়ার্ড, একটি মহিলা ওয়ার্ড এবং অপরটি অতিমাত্রায় ভারসাম্যহীনদের জন্য। তবে সেই ওয়ার্ডে যেতে হলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হবে। এখন সমস্যাটা হচ্ছে, একজন মার্শাল হয়েও তাকে কেন যেতে দেয়া হচ্ছে না সেই ওয়ার্ডে। যা জানার জন্য টেডির মনে চলতে থাকে নানা জল্পনা-কল্পনা। কি আছে সেই সি ওয়ার্ডে?
পলাতক রোগী র্যাচেলের অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরেক ভিন্ন রহস্যময় তথ্য। মেঝের আড়ালে রাখা এক চিরকুটে লেখা “The Law of 4, Who is 67?” এর অর্থ কী হতে পারে? ৬৭ ই-বা কে? দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. শীহানও হুট করে ছুটিতে চলে গেছে, এরকম জরুরি অবস্থায় নিশ্চয়ই কারও ঘুম হওয়ার কথা না। তাহলে সে কেন চলে গেল? অপরদিকে রোগীর ক্যাবিনের দরজা জানাল সব বাইরে থেকে বন্ধ হওয়া স্বত্বেও রোগী কীভাবে উধাও হয়ে গেল? এত এত প্রহরী রেখে জনশূন্য এই দ্বীপ থেকে কোথায়-বা পালিয়ে গেল? তাছাড়া এই দ্বীপ থেকে বের হওয়ার একটাই রাস্তা তা হলো ফেরি, যা কেবলমাত্র কর্তৃপক্ষের তদারকির মাধ্যমে হয়। তাহলে কি এখানকার কারও হাত আছে এখানে? নাকি সবার অন্তরালে চলছে ভিন্নধর্মী কোনও কর্মকাণ্ড?
এরকম হাজারও প্রশ্ন যখন মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকবে তখন আলোর বেগে ৩৬০° কোণে আপনার মাথায় পড়বে নতুন এক উল্কাপিণ্ড। যার প্রত্যাশা আপনি ভুলেও করেননি। এতক্ষণ মুভিতে যা যা দেখেছেন সেই গল্পের মোড় নিবে এবার অন্য এক ধারায়। প্রথমদিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ না দিলে পড়তে হবে দারুণ বিপাকে।
বিষয়টা এরকম হবে যে, সারাবছর এইচএসসি পরীক্ষার আশায় পড়াশোনা করেছি, আর এখন শুনি পরীক্ষায় হবে না।
পরিচালকের সেই উক্তি কি আর মিছে হতে পারে, একবার দেখে যেন মনে হলো কিছুই দেখিনি। তারপর বসেছি দ্বিতীয়বার, তাতেও যেন কিছু বিষয়ে খটকা রয়ে গেল। এভাবে বেশ কয়েকবার দেখার পর বুঝতে পারলাম, এই মুভি নিয়ে কোনো সমালোচনা হবে না।
তবে হ্যাঁ, বাকি দর্শকদের জন্য আমার কিছু বিশেষ পরামর্শ থাকছে। সেগুলো হলো, মুভি দেখার সময় আগুন এবং পানির দিকে একটু বাড়তি নজর রাখবেন।সংখ্যাটা নিয়ে খানিকটা মাথা ঘামাবেন। আর অবশ্যই সবার নামের দিকে লক্ষ্য রাখবেন, খুব বেশি অক্ষর ব্যবহার করা হয়নি, হতে পারে একই শব্দ নিয়ে স্থান পরিবর্তন করে একাধিক নাম তৈরি করা হয়েছে। তাও যদি বুঝতে অসুবিধা হয়, গুগুলে সার্চ করে মুভির ব্যাখ্যা জেনে নিতে পারবেন। কারণ মুভির হিডেন বিষয়গুলো যদি ধরতে না পারেন, তবে যে সব অদেখা অপূর্ণই রয়ে যাবে।
ধন্যবাদ।
This website uses cookies.