সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি যারা নিয়মিত দেখেন কিংবা খোঁজখবর রাখেন তাদের যদি প্রশ্ন করা হয়, রোমান্টিক জনরার ২০২০ সালের সেরা মুভি কোনটি? যেকেউ নির্দ্বিধায় প্রথমে মুখ উঁচিয়ে বলবে দিয়া মুভির কথা। কে এস আশোক পরিচালিত কন্নড় ইন্ডাস্ট্রি খ্যাত মুভিটিতে প্রধান চরিত্রে ছিলেন পৃথ্বী আম্বার (আদি), দীক্ষিত শেঠি (রোহিত), খুশী (দিয়া)।
১৩৬ মিনিটের এই মুভিটির সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক কথা ই মনে আসে। তবে থাক সে কথাগুলো এখানে না হয় মুভিটি নিয়ে কিছু তথ্যই দেওয়া হক আপনাদের। মুভি যদিও শুধুমাত্র ড্রামা জনরার কিন্তু শুধু ড্রামা জনরাতে ই এটি সীমাবদ্ধ থাকে নি। এই মুভিটিতে একটি সুন্দর রোমান্টিক গল্পও তুলে ধরা হয়েছে।
মুভিঃ দিয়া
ভাষাঃ কন্নড়
দেশঃ ভারত
রানটাইমঃ ১৩৬ মিনিট
রিলিজ সালঃ ২০২০
আইএমডিবি রেটিংঃ ৮.২/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৮.০/১০
পরিচালকঃ কে এস আশোক
জনরাঃ ড্রামা
পরিচালকের বিষয়ে বলতে গেলে তার প্রথম মুভি ছিল “৬-৫=২” নামক এক হরর, থ্রিলার মুভি, যা দর্শক মহলে যথেষ্ট প্রশংসনীয় ছিল। বেশ কিছুদিন অবসর নিয়ে আবারও ছুটে আসেন তার দ্বিতীয় মুভি দিয়া নিয়ে। যেখানে তাকে মোটেও ভাবতে হয়নি বক্স অফিস নিয়ে। একেবারে সুপারহিট তকমা নিয়ে নেন খুবই অল্প সময়ে। বর্তমানে অল্প বাজেটে এত দারুণ মুভি হয়তো খুব কমই দেখা যায়, যেখানে অন্যান্য পরিচালকরা বাজেট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ দিয়ে চলছে সেখানে তার এই ব্যতিক্রম পরিচালনাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
সকুল-কলেজে প্রেমে পড়েনি এমন লোকের সংখ্যা নেহায়াতই কম বলা যায়। কেউ হয়তো সেই প্রেমের সাগরে একা একা সাঁতরে বেড়িয়েছে আর কেউ সঙ্গী হিসেবে কাউকে আপন করে নিয়েছে। তবে আমি সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে কথা বলব, যারা তাদের সেই অব্যক্ত ভালোবাসা প্রকাশ করার সাহস খুঁজে পায়নি। আর সেরকম কেউ থেকে থাকলে দিয়া স্বরুপ নামক এই মেয়েটির সাথে নিজের মিল খুঁজে পাবেন।
সকুল-কলেজে প্রেমে পড়েনি এমন লোকের সংখ্যা নেহায়াতই কম বলা যায়। কেউ হয়তো সেই প্রেমের সাগরে একা একা সাঁতরে বেড়িয়েছে আর কেউ সঙ্গী হিসেবে কাউকে আপন করে নিয়েছে। তবে আমি সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে কথা বলব, যারা তাদের সেই অব্যক্ত ভালোবাসা প্রকাশ করার সাহস খুঁজে পায়নি। আর সেরকম কেউ থেকে থাকলে দিয়া স্বরুপ নামক এই মেয়েটির সাথে নিজের মিল খুঁজে পাবেন। দিয়া এবং রোহিত একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে, যদিও তাদের দেখাটা কাকতালীয় ভাবেই হুট করে হয়ে যায়। বলা হয়, প্রথম দেখার ভালো-লাগা নাকি সহজে ধরা দেয় না, আর ধরা দিলে তা সহজে ছাড়ে না। রোহিতের সুদর্শনতায় দিয়ার অবস্থা ঠিক এরকমই ছিল।
তার শয়নেস্বপনে শুধু একটাই নাম রোহিত, যদিও রোহিতের দৃষ্টিতে সেটা সম্পূর্ণ অজানা। যেহেতু একপাক্ষিক ভালো-লাগা, তাই সম্পর্ক সামনে টানতে হলে অবশ্যই তাকে কিছু একটা করতে হবে। নানা জল্পনা-কল্পনা আর ব্যার্থতা পেরিয়ে রোহিতের কাছে নিজের ভালো লাগার কথা উপস্থাপন করতে গিয়ে সামনে আসে নতুন বিপত্তি, এমন বিপত্তি যে চাইলেই সে আর রোহিতের ধরা পাবে না। কারণ রোহিত যে ইতোমধ্যে কোরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে। রোহিতের সেই অসম্পূর্ণ গল্প হয়তো কলেজেই শেষ হয়ে যেতে পারতো, কিন্তু যেই গল্পে দুজনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে, সেখানে গল্প কীভাবে এত দ্রুত ইতি টানতে পারে। ভালো-লাগা থেকে ভালোবাসা, আর সেই ভালোবাসায় কাটানো সুন্দর কিছু স্মৃতিবিজড়িত মূহুর্ত এনে দেয় তাদের ভালোবাসার সপ্ত-সুখ।
কিন্তু মানুষের জীবন মানেই চমক আর অলৌকিকতার সংযুক্তি। তবে এবার আর কাউকে ফেলে চলে যাওয়া কিংবা অপ্রকাশিত সুপ্ত কারণ নয়, এবার সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যা মানুষকে কাঁদায় একবার আর স্মরণ করায় শতবার। যার স্মৃতিতে মানুষ চোখ বন্ধ করে জীবন দিতে রাজি হয়ে যায়। ছোটবেলায় যে পাথরে হোঁচট খেতাম সেই পাথরে আবার সালাম করতাম, যেন ব্যাথা চলে যায়। ভিত্তি অবান্তর হলেও বাস্তব জীবনে ঠিক তাই ঘটে। ভালোবাসায় কেউ ছন্নছাড়া হলে সেই ভালোবাসায় তাকে আবার সুস্থ করে তোলে। আর ঠিক এই ভূমিকায় আবির্ভাব ঘটে আদি নামক এক চরিত্রের, যার সম্পর্কে যত বেশি বলব, ততই কম হয়ে যাবে। কারণটা আপনি মুভি দেখলে বুঝে যাবেন।
অসাধারণ অভিনয়, চঞ্চলতা, মায়ের প্রতি ভালোবাসা, নিঃস্বার্থভাবে অন্যের সুখের জন্য নিজেকে সপে দেয়া, সত্যিই অসাধারণ। আপনি আর একটি বিশেষ চরিত্রে মুগ্ধ হবেন তা হচ্ছে আদির মা। তাদের মা-ছেলের খুনসুটি ভালোবাসা আপনার মুভি দেখাকে উসুল করে দিবে নিমিষেই। তবে সেই উক্তি কি আর এত সহজে ফুরিয়ে যাবে? জীবন চমক আর অলৌকিকতায় ভরপুর। তারই ধারাবাহিকতায় দিয়ার জীবনে কোনো একভাবে আবারও রোহিতের আগমন ঘটে। সেই আগমন কি দিয়ার জন্য সুখকর হবে? দিয়া কি আদিকেও ভালোবেসে ফেলেছে? আদি কি পারবে দিয়াকে অন্যের হাতে তুলে দিতে? মায়ের কথা রাখেনি বলেই কি আদির জীবন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল?
ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে যারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তাদের জন্য অসাধারণ কিছু পরিপাটি মেসেজ দেয়া আছে। মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা এবং সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা কতটা গভীর তা দেখতে পারেবেন। যে মা ছেলের না বলা কথাও মুখ দেখে বুঝে নিতে পারে, তার চাওয়া-পাওয়া মুখ ফুটে বলার আগেই হাজির করে দিতে পারে।
সমালোচনা বলতে গেলে একটাই, তা হচ্ছে পরিসমাপ্তি। যা দেখার পর আপনি স্তব্ধ হয়ে যাবেন, আর পরিচালককে একগাদা গালি দিতে থাকবেন। কারণ পরিচালকের অবশ্যই চরিত্র নিয়ে খেলার অধিকার আছে কিন্তু আপনার ইমুশন নিয়ে নয়।
সেই ইমুশনের জায়গাটা একেবারে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিবে।
আর হ্যাঁ জীবন মানেই চমক আর অলৌকিকতার সমষ্টি। তাই বলে যে আমাদের আত্মহত্যাকেই পথ হিসেবে বেছে নিতে হবে, তা নিতান্তই ভুল। যার জন্য প্রাণ দিতে যাচ্ছেন, কে জানে হয়তো সেই আপনার অপেক্ষায় অন্ধকারে দিন গুণে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ।
This website uses cookies.