ব্রিমস্টোন মুভিটির বাংলা সাবটাইটেল (Brimstone Bangla Subtitle) বানিয়েছেন মোঃ আসাদুজ্জামান। ডাচ ডিরেক্টর মার্টিন কুহলভেন এর প্রথম ইংলিশ সিনেমা ব্রিমস্টোন । এত সুন্দর একটা গল্পের লেখক ছিলেন মার্টিন কুহলভেন। ২০১৭ সালে ব্রিমস্টোন মুক্তি পায় । ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজে এখন পর্যন্ত ৩০,৮৭৯টি ভোটের মাধ্যেমে ৭.১ রেটিং প্রাপ্ত হয়েছে মুভিটি।ব্রিমস্টোন মুভিটি বক্স অফিসে ২.১ মিলিয়ন আয় করে।
“Brimstone”, “লালসালু” এবং মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ময়নাদ্বীপ। শব্দত্রয়ের একই সমানে মিলানোর গল্প বলার শুরুতে বলে রাখি- Brimstone আমার দেখা অন্যতম সেরা সিনেমা হয়ে থাকবে। এই সিনেমা ঘিরে যাবতীয় আলোচনা-সমালোচনা আগ্রহভরে শুনব। এখন সিনেমা দেখার আফটার রিয়েকশন নিয়ে অল্পকিছু বলি –
শুরুর শব্দ তিনটি আপাতত বিচ্ছিন্ন ঠেকলেও এদের ভাবসাব আমার কাছে একই, যদিও এদের চলার পথ কিছুটা অসম, মাধ্যমও পুরোপুরি ভিন্ন তবুও অস্তিত্বের হিসাবে এরা যেমন সমসাময়িক গন্তব্যের বিচারেও তেমনই প্রাসঙ্গিক। এইখানে লালসালুকে টেনে আনায় লাল রঙের একটি বিশেষ ধর্ম বলি। লাল হল বর্ণালীর প্রান্তীয় বর্ণ যার বিক্ষেপণ কম কিন্ত তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি। তাই এটিই সবার আগে আমাদের চোখে পড়ে, মস্তিষ্কে সিগন্যাল পাঠায় এবং আমরাও চেতনে অবচেতনে এর অস্তিত্বে ধরা পড়ে যাই। এ বিভ্রম অস্তিত্ব এবং ভ্রান্তির জালেই দূরদর্শী মজিদ শিকার ধরেন। ভয়ের ব্যাবসা জিইয়ে নিজের আখের গোছান। লালসালু বিছিয়ে কাজে লাগান স্বপ্রণেদিত ধরমের নানা ধারা-উপধারা। ফাঁদে পড়ে যায় নির্ভেজাল তাহেরের বাপ, প্রতাপশালী খালেক ব্যাপারী কিংবা আলাভোলা পুরো সমাজ। এই সুচতুর মজিদের মিলাদের সুর আর ইশারার মায়ায় আমরা কি Brimstone এর রিভারেন্ডকে দেখতে পাই?
মূলত Brimstone’র রিভারেন্ডই হল লালসালুর রিভারশন, সিনেমায় মজিদের সবেগ প্রত্যাবর্তন। সে-ও নিজের ভোগ-লালসা-কামের জাস্টিফিকেশনে বেছে নেয় ধর্মের মত স্পর্শকাতর দর্শন, ব্যাখ্যা করে ভয়ের সারমন, আর বিকৃত মনসের খোরাকে চালু রাখে শোষনের হীন মাধ্যম-খোদ নিজের পরিবার। তবে এইখানেই, তার নিজের ঔরসেই জন্ম নেয় এক বীরাঙ্গনা যোদ্ধা। সিনেমায় তার পরিচয় “জোয়ানা”। আমার কাছে Brimstone এর জোয়ানা নারীর অনন্য বলিষ্ঠ সুর। এই সুর কখনো শ্রাব্যতার সীমা ছাড়িয়ে নিদারুণ বাজখাঁই আবার কখনো বেশ মোলায়েম। এই জোয়ানা মাতৃত্ব্যে যেমন কোমল টিকে থাকার লড়াইয়ে তেমন সংগ্রামী। তার সংগ্রাম কখনো নিজের বাঁচা-মরার দুঃসাহসী সিদ্ধান্তে অথবা বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প নির্বাচনে অবিচল প্রত্যয়ে। জোয়ানাকে স্যালুট! ডাচ ডিরেক্টর Martin Koolhoven এর প্রথম ইংলিশ সিনেমা এটি, ভায়োলেন্স ডেপিকশনের দিক থেকে কিছুটা Tarantino বা Coen Brothers ঢংয়ে বানানো এই সিনেমার গল্পও লিখেন তিনি নিজে। Dakota Fanning, Guy Pearce, Kit Harington এর অনবদ্য অভিনয়ের পাশাপাশি এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক স্কোরের প্রসংশা করতে হয়। রহস্যের ইনটেন্সিতে শব্দের ভালোই খেল দেখিয়েছেন Junki XL।
এবার ময়নার দ্বীপে ফিরে আসি। সাধের পাখি ময়না, তেমনই সাধের দ্বীপ ছিল হোসেন মিয়ার ময়নার দ্বীপ। পদ্মা নদীর মাঝির চিত্রায়ণে এই দ্বীপের বেশ তাৎপর্য আছে। শোষিত সমাজের নানা কন্সট্রায়েন্ট ভেংগে, মানবিক প্রেমের যাবতীয় মুক্তি এবং লৌকিক ধর্ম, রীতিনীতির ঊর্ধ্বে একটা নির্মল, শান্ত এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থার বাস্তব চিত্রায়ণই হল ময়নার দ্বীপ। এর মূল রূপকার থাকেন হোসেন মিয়া। এর জন্যে চওড়া মূল্যও গুনতে হয়। তিনি কখনো রূঢ়, কখনো মিষ্ট, কখনো ত্রানকর্তা আবার কখনো আমরা তাকে দেখি ত্রাসের এক রহস্যময়ী, তবুও দিনশেষে তিনি মূলত একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। নতুন আলোর, নতুন করে বাঁচার জন্যে জংগল মাড়িয়ে যে সুন্দর বাসযোগ্য ইউটোপিয়ার জন্ম দেয়। আলো-আঁধারির আর সত্য-মিথ্যের নানান ডাইমেনশনেই তারে হাজির করেন লেখক। আমাদের Birmstone এও Martin Koolhoven তাই করে। প্রচলিত নিয়মের অভিশপ্ত বাঁধন থেকে মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যান জোয়ানাকে। জোয়ানা স্বপ্ন দেখে তার প্রজন্মের বেড়ে উঠার উচ্ছ্বাসে। পাড়ি দেয় দীর্ঘ পথ, জমে যায় পিছুটানের শত গল্প, তবুও হাল না ছেড়ে হার না মেনে শেষটায় সে রেখে যায় প্রজন্মের নিরাপদ স্থল। তার সন্তানের ইউটোপিয়া৷ সিনেমায় জোয়ানার জন্মই যেন আরেক হোসেন মিয়ার রেজ্যেরেকশন।
লেখা শেষ করার আগে Brimstone শব্দটি নিয়ে বলি। Brimstone এর অন্যনাম হল Sulphur. যারে আমরা গন্ধক হিসাবে জানি। গন্ধক হল নরকের জ্বালানী বা নরকাগ্নি। সিনেমায় আমরা যদি রেভের্যান্ডকে সেই জ্বালানী হিসাবে নেই তবে প্রশ্ন থাকে স্বয়ং নরক এখানে কে?
রিভিউ করেছেনঃ Alamin Ahmed Seam
This website uses cookies.
View Comments
বাংলা সাবটাইটেল নাই