উস্তাদ হোটেল ১৩ জুলাই ২০১২ সালে রিলিজকৃত মালায়লাম মুভি। এই মুভিটি ৩ বার ন্যাশনাল এওয়ার্ড জিতেছে বেষ্ট পপুলার ফিল্মের জন্য। যার ডিরেক্টর ছিলেন আনোয়ার রাশিদ। লেখিকা অঞ্জলী মেনন । প্রডিউসার লিষ্টিন স্টেফান। দুলকার সালমান এবং থিলাকান এর সাবলীল অভিনয়ের বদৌলতে একটা সাধারণ গল্পকে অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফিতে ধারন করা হয়েছে, যা মনে গেথে থাকবে বহুকাল। মুভিতে নেই মাসালা মুভির মত মারামারি বা একটু পর পর টুইস্ট, কিন্তু আপনি মুভিটা দেখা শুরু করলে শেষ না করে উঠতে পারবেন না। মুভিটি দেখতে দেখতে আপনার মনে হবে আরে চরিত্রগুলো তো আপনার খুব চেনা, আপনারই আপনজন কাহিনীটা আপনার আশে পাশে মানুষদের। কাহিনীটায় খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছে খাদ্য কারও কাছে বিলাসিতা, শখ পূরনের হাতিয়ার, আবার কারও কাছে তা এক বেলা খাবার সংগ্রাম। খালেদ মাহমুদ খান নির্মিত বাংলা সাবটাইটেল দিয়ে দেখে ফেলুন মাস্ট ওয়াচ মুভিটি।
একটি মানুষের জন্ম হয় তিন বার। একবার যখন সে ভুমিষ্ট হয়। দ্বিতীয়বার যখন সে শিক্ষা লাভ করে। তৃতীয়বার যখন সে প্রশিক্ষন লাভ করে পোক্ত হয়। এই ফিল্মটি একজন মানুষের তৃতীয় জন্মের উপর ভিত্তি করে বানানো।
আব্দুর রাজাক (উচ্চারন অনুসারে) এবং ফরিদা কেরালাতে বসবাস করেন । ফরিদা গর্ভবতী ছিলেন। রাজাকের আশা তার ঘরে একটা ছেলে আসবে ।কিন্তু সে আশার মুখে ছাই দিয়ে একটি মেয়ে জন্ম নেয় তার ঘরে । রাজাক আশা ছাড়েনা এভাবে পর পর আরো তিন বার তার ঘরে মেয়ে জন্মগ্রহন করে । রাজাক ৫ম বার আশা ছেড়েই দেয় হাসপাতালে ও আসেনা সেইবার জন্ম নেয় তাদের প্রথম ছেলে সন্তান। কিন্তু বার বার গর্ভধারনের ফলে ফরিদা মারা যায় । রাজাক চার মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে আসে দুবাইতে ।চার বোন তাকে দেখা শোনা করে বড় করে তুলতে থাকে । এই কারনেই হয়তো ছোট বেলা থেকেই রান্নার দিকে ফাইযির প্রবল ঝোক ।বোনদের সাথে রান্না করতে করতে সে রান্নার প্রতি অন্যরকম একটা আকর্ষন বোধ করে সবসময়। সময় উড়ে যেতে থাকে ফাইযির বড় হয় এবং তার সঙ্গী বোনেদের এক এক করে বিয়ে হতে থাকে । একটা সময় দেখা যায় সে একা হয়ে যায় ঘরে। তার বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে। ফাইযির বাবা তাকে বাইরে পড়তে তে পাঠাতে চায় । সে ইউনিভার্সিটি অফ লুসান এ শেফ হবার জন্য পড়তে যায় কিন্তু বাবাকে বলে যে সে আসলে হোটেল ম্যানেজম্যান্ট পড়তে যাচ্ছে।
ফিরে আসতেই তার বাবা তাকে বন্ধুর মেয়ের (নিতিয়া মেনেন) সাথে বিয়ে দেবার জন্য মেয়ে দেখাতে নিয়ে যায় সেখানে সবাই জানে যে ফাইযি আসলে শেফ ।তার বাবার কোজিকুডেতে পাঁচতারা হোটেল খোলার স্বপ্ন যেন এক নিমেষে ভেঙ্গে যায় । তার বাবা রেগে গিয়ে ফাইযির পাসপোর্ট ,ক্রেডিটকার্ড সব রেখে দেয়। নতুন পাসপোর্ট তৈরী হবার আগ পর্যন্ত সে তার দাদার কাছে থাকবে বলে স্থির করে, তার দাদা করিম যাকে সবাই ভালোবেসে করিম ইক্কা ডাকেন, তার তৈরী হোটেল উস্তাদ হোটেল যেটা তিনি ৩৫ বছর ধরে চালাচ্ছেন। এখানেই ফাইযির তৃতীয় জন্ম শুরু হয়।
তাকে তার দাদু কোনভাবে রান্নার কাজ করতে দিচ্ছিলেন না । রান্না করা সামগ্রী ডেলিভার করা , টেবিল পরিস্কার করা , হিসাব করা এসব কাজ করাচ্ছিলেন । এর মাঝে তার কাল্লুমাক্কায়েস ব্যান্ডের মেম্বারদের সাথে বন্ধুত্ব হয় । এভাবেই জীবন যাচ্ছিল ফাইযির। করিম ইক্কা তাকে পরোটা বানাতে দিলে সে কিছুতেই বানাতে পারছিল না দেখে দেখে কিন্তু হাল ছাড়লোনা ফাইযি শেষে সফল হয়ে করিম ইক্কা কে খাওয়াতেই।করিম ইক্কা বললো রান্নাই শুধু জানাটাই প্রয়োজনীয় নয় অনুভব টা ও সমান দরকারী। করিম ইক্কার সুপারিশে এরপর বিচ বে হোটেলে চাকরি লাভ । শাহানার সাথে নতুন ভাবে দেখা হওয়া । ফুড ফেষ্টিভালে শাহানার উড বি হাসব্যান্ড কতৃক ইন্সাল্ট । শাহানার ফাইযির জন্য বিয়ে না করা মুভিটিকে প্রতি ক্ষেত্রে জমিয়ে গেছে ।
করিম ইক্কার লাখ টাকার লোন চুকাতে না পারা ব্যাঙ্ক এর ম্যানেজার আর বিচ বে এর মালিকের পুলিশ পাঠিয়ে উস্তাদ হোটেল বন্ধ করে দেয়া। সেখানে নাকি অসাস্থ্যকর খাদ্য বিক্রি হয় । ফাইযি কি বাচাতে পারবে উস্তাদ হোটেল কে ? পারবে সময়মত চুকাতে ঋন ? এই ঋন চুকানো কি কাহীনির এন্ডিং? সেটা জানতে একবার দেখুন এই মুভিটি । আমার জীবনে দেখা সেরা এন্ডিং। শুরুটা হয়তো হাসি দিয়ে হবে শেষটা কান্না দিয়ে আমি করতে বাধ্য হয়েছি।
দুলকার চরিত্রে মিশে যেতে পারার প্রতিভা সকলের থাকেনা।নিথিয়া দুর্লভ অভিনয় শক্তি নিয়ে জন্মেছে আমি বলবো। আমি এখনো তার অভিনয়ে কখনো হতাশ হইনি। থিলাকান এই লোকের অভিনয় হা করে দেখেছি খালি। অভিব্যাক্তিহীন ভাবে যে কত কথা বলা যায় এই মুভি না দেখলে বুঝতাম না । অনেকের সালমানের কথা বলেন নিথিয়ার কথা বলেন আমার কাছে এই ফিল্মের সেরা অভিনেতা থিলাকান।
রিভিউ করেছেনঃ Sudipta Chowdhury
Adore 2013 movi subtile plz