টিভি সিরিজ

গেম অফ থ্রোন্স (Game of Thrones) সিরিজ রিভিউ (ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় টিভি সিরিজ)

আজকে এমন একটি সিরিজ নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি, যার সম্পর্কে বলতে গেলে আমাকে কমপক্ষে ২/৩ দিন লিখতে হবে। কারণ যত লিখব ততই কম মনে হবে। ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় টিভি সিরিজ হলো এই গেম অফ থ্রোনস, এবং আমার ব্যক্তিগত ওয়াচলিস্টে রয়েছে এক নাম্বারে। আমি মোটেও অন্যান্য গুণী সিরিজ যেমন, ব্রেকিং ব্যাড, লা কাসা, প্রিজন ব্রেক, স্ট্রেঞ্জার থিংস, পিকি ব্লাইন্ডার্স, ডার্ক ইত্যাদি জনপ্রিয় সিরিজগুলোর সাথে তুলনা করছি না। আমি স্রেফ আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছি।

গেম অফ থ্রোন্স সিরিজ ইনফো

সিরিজটির পরিচালনায় ছিল যৌথ সংযোজনার এক বিশাল দল। যাদের মধ্যে গুণী কয়েকজনের নাম উল্লেখ করতেই হয়, তারা হলেন- David Benioff, George R.R. Martin, D.B. Weiss.

সিরিজঃ গেম অফ থ্রোন্স
ইন্ডাস্ট্রিঃ হলিউড
ভাষাঃ ইংলিশ
দেশঃ ইউএসএ
মোট সিজনঃ ০৮
মোট এপিসোডঃ ৬০
রানটাইমঃ ৫৭ মিনিট গড়
রিলিজ সালঃ (২০১১-২০১৯)
আইএমডিবি রেটিংঃ ৯.৩/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৯.৭/১০
ক্রিয়েটরঃ ডেভিড বেনিফ, জর্জ আর আর মার্টিন
কাস্টঃ পিটার ডিংক্লেজ, লেনা হেইডি, এমিলিয়া ক্লার্ক, কিট হারিংটন
জনরাঃ অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, ড্রামা

সিরিজ পরিচিতি

আমি যখন প্রথমদিকে সিরিজটি দেখা শুরু করি, তখন প্রথম সিজন দেখতে খুবই বোরিং লেগেছে, মনে হয়েছে, এত এত চরিত্র, কোনটা দিয়ে কী হবে, কে কখন কাকে কী বলছে কিছুই মাথায় আসতো না। ভাবতাম আর দেখবা না, তাও আবার মনে হতো সামনে অবশ্য স্পেশাল কিছু আছে বলেই এটা বিশ্বখ্যাত সিরিজ। চুপটি করে যাস্ট দেখে যেতাম, আর বিনোদনের খোরাক হিসেবে তো ছিলই একজন বামন মানুষ, যে সবারই প্রিয় টিরিয়ন ল্যানিস্টার। তাছাড়া মাঝে মাঝে ১৮+ সিনগুলো চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিতো। ওহ হ্যাঁ, আগে থেকেই একটা হুংকার দিয়ে রাখছি, সিরিজটি সম্পূর্ণ ১৮+ সিরিজ। এরকম কোনো এপিসোড সম্ভবত বাদ নেই, সেখানে নগ্নতা, অশ্লীলতা কিংবা খুন-খারাবি দেখানো হয়নি। তাই একটু বুঝে-শুনে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষজন দেখবেন এবং অবশ্যই পরিবার থেকে দূরে গিয়ে।

কারণ এটা মোটেও ফ্যামিলি ম্যাটেরিয়াল না, কখন কী শুরু হয়ে যায় বলা মুশকিল। আর সিরিজের সময়কাল আশা করি লক্ষ্য করেছেন, সেই ২০১১ সাল থেকে শুরু করে চলেছে লাগাতার প্রায় ৮ বছর। তবে সাথে রয়েছে গেম অফ থ্রোনস ফ্যানদের জন্য একটা বিশাল সুখবর। আগামী ২০২২ সালে আসতে যাচ্ছে গেম অফ থ্রোনস এর প্রিক্যুয়েল। প্রিক্যুয়েল বলতে সিরিজের গেম অফ থ্রোনস এর পূর্ববর্তী রাজাদের শাসনামল নিয়ে। অর্থাৎ যেখান থেকে গেম অফ থ্রোনস শুরু হয়েছে তার থেকে আরও ৩০০ বছর আগের গল্প নিয়ে। সুতরাং নিঃসন্দেহে অসাধারণ কিছুর দেখা আমরা আবারও খুঁজে পাব।

কেন্দ্রীয় চরিত্র সমূহ

কেন্দ্রীয় চরিত্র নিয়ে আলোচনা করাটা এই সিরিজের জন্য বিশাল কঠিন বিষয়। কারণ আমি আগেও বলেছি, এখানে এত এত পরিমাণ চরিত্র নিয়ে স্টার্টিং হয়েছে যে বলে শেষ করা যাবে না। আর আমি তো এত চরিত্রের মেলা দেখে আমি তো অবাক হয়ে বলে দিয়েছিলাম, এগুলো শেষ করবে কীভাবে? মানে তাদের যোগসাজশ করবে কী করে! কিন্তু তা না, জর্জ আর আর মার্টিন আমাদের এসব ভ্রান্ত ধারণার তোয়াক্কা না করে আরামসে টেনে দিয়েছেন সিরিজের শেষ। কিন্তু সমস্যার উৎপত্তি এখান থেকেই। প্রথম সিজন থেকে সপ্তম সিজন পর্যন্ত কারও কোনো অভিযোগ ছিল না, যে দেখেছে সেই ইতিহাসের সেরা সিরিজ বলে আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু কীই-বা এমন রয়েছে অষ্টম বা শেষ এপিসোডে যার জন্য দর্শক ক্ষেপে গিয়ে রেটিং কমিয়ে টপ টেনেরও বাইরে নিয়ে গেছে!

উত্তরটা আমি একটু সহজ করে দিচ্ছি, এন্ডিং নিয়ে মানুষের আক্ষেপ কখন বেশি হয়, অবশ্যই যখন এন্ডিংটা তার মনের মতো না হয়, বা প্রিয় চরিত্রগুলো নিয়ে কাটা নাড়া হয়। এখানেও ঠিক তাই ঘটেছে, এত এত সংগ্রাম শেষে প্রিয় চরিত্রগুলো কেমন জানি খাপছাড়া হয়ে গেল। প্রিয় চরিত্র নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই আসে জন স্নো (Kit Harington) এর নাম, তারপর সবার প্রিয় সাদা চুলওয়ালী সুন্দরী ড্যানেরিয়াস টার্গেরিয়ান (Emilia Clarke)। আর তার উপরেও যদি অভিনয় আর বাক্যসংযম বা ডায়লগের জন্য কাউকে ভালো লেগে থাকে তবে সেটা নিঃসন্দেহে টিরিয়ন ল্যানিস্টার (Peter Dinklage), আর তার একমাত্র বোন সার্সি ল্যানিস্টার (Lena Headey)। সার্সি ল্যানিস্টারের কথা বলতে গেলে, আপনি যদি কোনো নেগেটিভ রোলকে ঘৃণার ঠেলায় গলা চিপতে না যান, তবে সে আবার কীসের নেগেটিভ রোল প্লে করছে। ভাইরে ভাই, সার্সি ল্যানিস্টার এমন এক চরিত্রে অভিনয় করেছে, যাকে দেখে আপনি প্রথম থেকেই বিরক্ত হতে শুরু করবেন, আর নিজ হাতে তাকে মাটিচাপা দিয়ে থ্রোনসে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাইবেন।

সিরিজটির সার্বিক আলোচনা

গেম অফ থ্রোনস মূলত ৭ টি সুবিশাল রাজ্যের গল্প নিয়ে তৈরি একটি সিরিজ। যেখানে দূর-দূরান্তের ৭ টি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ বা রাজধানী নিয়ে শুরু হয় গল্পের পথচলা। সম্পূর্ণ রাজ্য হাতের মুঠো পেতে কে-বা না চায়, কিন্তু তার জন্য তো আগে প্রয়োজন যোগ্যতা বা শক্তি। তার উপর আবার সম্মিলিত রাজ্যের রাজার ক্ষমতার বলকে সবাই ভয় পায়। কারণ তিনি এমন কাউকে হারিয়ে রাজ্যের ক্ষমতা হাতে নিয়েছেন যা মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি। টার্গেরিয়ানরা লাগাতার রাজ্যগুলোর উপর অমানবিক নির্যাতন আর অত্যাচার করে এসেছে, সেই অত্যাচার থেকে বাঁচতেই তারা বর্তমান রাজা রবার্ট ব্যারাথিওন এর পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু টার্গেরিয়ানদের এত অত্যাচারের কারণ বা শক্তির উৎস কী ছিল?

Related Post

তার উত্তর শুধু একটা শব্দেই সম্ভব, তা হলো তাদের কাছে ছিল অটল শক্তিশালী ক্ষমতাধর ড্রাগন। তাও কোনো সাধারণ ড্রাগন না, ঝিকঝিকে চোখওয়ালা, মুখ দিয়ে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের করা বিশালদেহী ড্রাগন। যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো তো দূর, কথা বলাই যেন নিজের গায়ে আগুন মেখে নেয়া। যাইহোক, এটা ছিল থ্রোনসের প্রিক্যুয়েল সিরিজের অংশ, বেঁচে থাকলে আশা রাখি ২০২২ সালে এই সিনগুলো আরও অসাধারণভাবে দেখতে পাবেন। হঠাৎ সেভেন কিংডমের হ্যান্ড অফ দ্যা কিং (রাজার পরে সেভেন কিংডমের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি) মারা যান।

 

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রাজা তার পরিবার এবং সৈন্যসমাবেশ নিয়ে হাজির হয় এক অপূর্ব সুন্দরতম রাজ্য উইন্টারফেলে। উইন্টারফেলের রাজার সাথে তার বেশ ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সখ্যতা রয়েছে, তাই এবার তাকে হ্যান্ড অফ দ্যা কিং বানানোর প্রস্তাবে খোদ নিজে এসেই হাজির তার দোয়ারে। নিজেদের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে বাঁধেন আত্মীয়তার সুতোয়। কিন্তু আচমকা এক কাকতালীয় আক্রমণে সেভেন কিংডমের রাজা রবার্ট ব্যারাথিওনের মৃত্যু হয়। আর তারপর থেকেই শুরু হয় সেভেন কিংডমের আসল রাজনীতি। আর এদিকে টার্গেরিয়ান বংশের বেঁচে যাওয়া ড্যানোরিয়াস টার্গেরিয়ান এবং তার ভাই উঠেপড়ে লাগে তাদের সিংহাসন পুনর্দখল করার।

প্রয়োজনে সাহায্য চেয়ে বসে ডোথরাকি নামক বর্বর এক জাতির নিকট, যাদের লাইফে হারের বিন্দুমাত্র নাম-গন্ধ নেই। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য যে, সিরিজে ডোথরাকিরা ভিন্ন একটা ভাষা ব্যবহার করে, পরিচালনা কমিটি থেকে জানা যায়, সিরিজের ইউনিকতা বৃদ্ধি করতে শুধুমাত্র ডোথরাকিদের জন্যই আলাদাভাবে এই ভাষাটি সৃষ্টি করা হয়েছিল। তো একদিকে সেভেন কিংডমের অন্দরমহলে নিজেদের মাঝে দ্বন্দ্ব অপরদিকে টার্গেরিয়ানদের আক্রমণ, এবং তারচেয়েও বড় সমস্যা উইন্টার ইজ কামিং(প্রথম এপিসোড দেখলেই বুঝে যাবেন মৃতরা কীভাবে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে)। সবমিলিয়ে সেভেন কিংডমের জয়ের নেশায় আপন ভাইবোনকেও তোয়াক্কা না করে, রক্তের সম্পর্ক ভুলে গিয়ে যেভাবে ক্ষমতার লড়াইয়ে নেমে পড়ে তা দেখতে দেখতে আপনি ভুলেই যাবেন যে আপনি একবিংশ শতাব্দীতে পড়ে আছেন।

সিরিজটি নিয়ে ব্যক্তিগত অভিমত

প্রিয় সিরিজ নিয়ে আলাদাভাবে কী মন্তব্য দেব তা জানা নেই। শেষ সিজনে এসে নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, এ কী করলো পরিচালক? এর চেয়েও ভালো এন্ডিং দেয়া যেত, এতগুলো মানুষকে না কাঁদালেও পারতো! এতগুলো মানুষকে ডিপ্রেশনে না ফেললেও পারতো। তবে সর্বোপরি যা হয়েছে তার সাথে আমি সম্পূর্ণ দ্বিমত হলেও তাদের কিছু যুক্তির খাতিরে বলতেই হচ্ছে সেভেং কিংডম অবশেষে ফিরে পেয়েছে তাদের আসল রাজাকে। যারা ১৮+, খুন-খারাবি সহ্য করতে পারবেন, তাদের জন্য একটাই কথা বলব, স্রেফ একবার শুরু করুন এবং তৃতীয়/চতুর্থ সিজন পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন, তারপর দেখবেন বাকিটা আপনাকে না ঘুমিয়ে এমনিতেই দৌড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

[গেম অফ থ্রোনস যারা দেখে ফেলেছেন তাদের জন্য স্পয়লারসহ নানান জানা-অজানা খুটিনাটি বিষয় সবিস্তর আলোচনা নিয়ে আমি আবারও হাজির হবো, খুব শীঘ্রই।]

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
#Stay_home
#Stay_safe
ধন্যবাদ।

This website uses cookies.