ইন্ডিয়ান সিরিজ নিয়ে আলোচনা করলে সবার মুখে মুখে প্রথমে যে সিরিজটির নাম আসে সেটি হচ্ছে মির্জাপুর। স্বাভাবিক শুরু থাকলেও প্রচুর দর্শক চাহিদা আর অনুরোধে সেকেন্ড সিজনেও যেতে বাধ্য হয়েছে এই সিরিজ। বেশিরভাগ আউট কান্ট্রির কোনো দর্শক ইন্ডিয়ান থ্রিলার সিরিজ দেখা শুরু করা মানে এই মির্জাপুর দিয়ে শুরু করা। অনেকেই নির্দ্বিধায় এই সিরিজকে আখ্যা দিয়েছেন সেরা সিরিজ বলে।
অংশুমান এবং পুনীত কৃষ্ণ পরিচালিত মির্জাপুর একটি অ্যাকশন ক্রাইম থ্রিলার ওয়েব টেলিভিশন সিরিজ। সিরিজটি মূলত মির্জাপুরে শুটিং হয়েছে, তাছাড়াও জৌনপুর, আজমগড়, গাজীপুর, লখনউ, রায়বারেলি, গোরক্ষপুর এবং বারাণসীতে কয়েকটি শট রয়েছে। যা চারপাশে মাদক চালান, বন্দুক, হত্যা এবং নানান অনাচার এবং কাছের মানুষদের প্রতি রয়েছে হিংসা, বিশ্বাসঘাতকতা।
মুভিঃ মির্জাপুর
ইন্ডাস্ট্রিঃ বলিউড
ভাষাঃ হিন্দি
দেশঃ ভারত
মোট সিজনঃ ০২
রিলিজ সালঃ (২০১৮- )
আইএমডিবি রেটিংঃ ৮.৪/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৮.৫/১০
পরিচালকঃ কারণ আঁশুমান, পুনেত কৃষ্ণ
কাস্টঃ পঙ্কজ ত্রিপাঠি, আলী ফজল, দিব্যেন্দু শর্মা, শ্বেতা ত্রিপাঠি
জনরাঃ অ্যাকশন, ক্রাইম, থ্রিলার
“মির্জাপুর” নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এটি একটি জায়গার নাম। সিরিজটিও ঠিক এমন একটা জায়গাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। আমাজন প্রাইমের মির্জাপুর সিরিজটি মূলত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে রচিত হয়েছে। যার আনাচে-কানাচে রয়েছে হাজারও নব্য-বাস্তবতার আনাগোনা। আইনকানুনের ধার না ধারা উত্তর প্রদেশের অলিতে গলিতে এই সিরিজিরের মাধ্যমে নৃশংসতা ছড়িয়ে দিয়েছেন পরিচালক করণ অংশুমান এবং পুনীত কৃষ্ণ।
আলি ফজল, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, দিব্যেন্দু, রসিকা দুগগাল, ভিক্রান্ত মাসসী, রাজেশ তাইলং, শিবা চাড্ডা, শুভ্রজ্যোতি বারাট, শ্বেতা ত্রিপাঠি সবাই চরিত্রের সাথে মিশে গেছে। তবে পঙ্কজ ত্রিপাঠি ছিল সবার থেকে সেরা। তার অভিনয় আর এক্সপ্রেশন ছিলো দেখার মতো। আলি ফজল ও বডিবিল্ডারের ক্যারেক্টর এর সাথে ভাল ভাবে মিশে গেছেন। লজ্জার এক্সপ্রেশন দিয়ে সিরিজটাকে রোমান্টিকতার চরমে নিয়ে গেছেন। দুই ভাইয়ের কেমেস্ট্রি ছিল একেবারে অসাধারণ। একজনের প্ল্যান আর আরেকজনের একশন। ও হ্যাঁ, কুলভূষণ খারবান্দা ছিলো সিজন জুরে মূল মাস্টারমাইন্ড। হুইল চেয়ারে বসে টিভি প্রাণীদের যৌনতা দেখা যার কাজ তাকে সিজনের শেষে দেখবেন ভিম্ন এক রুপে, যা ছিল পুরাই অপ্রত্যাশিত। অবশ্য পারিবারিক ইতিহাসে মির্জাপুর রাজত্বে তা অবদান ব্যপক।
মির্জাপুর এমন একটা জায়গা যেখানে সব কিছু চলতে পারে। নেই বাধা নেই কাউকে পরোয়া করার মতো সময়। তবে অবশ্য সবার বেলায় তা না। যা শুধু খাটবে মির্জাপুরে যে রাজত্ব করবে শুধু তার।তাইতো মিরজাপুর সিরিজের প্রথম সিজনের প্রথম এপিসোডে থেকেই শুরু হয় খুন আর নৃশংসতার সাথে ক্ষমতার প্রভাব। মিরজাপুর এর রাজত্ব কে নিবে তার এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সেই সাথে খুনাখুনি, অস্ত্রের ব্যবসা, যৌনতা তো আছেই।
কোন কিছুই যেনো নিরাপদ না। কলীন ভাই এর নামেই শুরু হয় মিরজাপুর এর রাজত্ব। দ্বিতীয় এপিসোডের শুরুতেই গ্যাংস এ যোগ দেয় বাবলু পন্ডিত আর তার ভাই। সেই সাথে শুরু হয়৷ হিংসা। মুন্না ট্রিপাটি ধারনা করতে থাকে রাজত্ব এই বুঝি তার হাত থেকে সরে যাবে।ছক কসে নিজের বাবার বিরুদ্ধেই।কিন্তু গোলমাল যে শেষ ই হয়না। অন্যদিকে বাবলু পন্ডিত আর তার ভাই এর প্রভাব বাড়তেই থাকে, অন্যদিকে গ্যাংসের ব্যবসা।বাবলু পন্ডিতের প্ল্যানে অস্ত্রের ব্যবসা বহুগুন বেড়ে যায়, সন্ত্রাস বাড়তে থেকে। যা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেতে থাকে। শুরু হয় আরেক খেলা, তবে মিরজাপুরের রাজত্বের পেছনে এক পুরোনো পারিবারিক ইতিহাস লুকিয়ে আছে যার জের ধরে চলতে থাকে পুরো সিরিজ। মাঝেমধ্যে কিছু টুইস্ট আসবে অবাক হওয়ার মতো। সবশেষে বলা যায় মিরজাপুর সিরিজে আপনি দেখতে পারেন হিংস্ত্রতা, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গালাগালি আর পিস্তল রেখে রেজার দিয়ে খুন করার মতো ভয়বাহ দৃশ্য দেখতে। তবে হ্যাঁ সব কিছুর ভেতরেও কিছু রোমন্টিকতা আছে। মাঝেমধ্যে দেখা মিলবে প্রেম,ডেট,বিয়ে সংসার। পাশাপাশি কিছু কমেডি দেখে অবশ্যই হেসে দিবেন চরমে। তাই সংক্ষেপ বলা যায়, মির্জাপুর সিরিজে আপনি একসাথে ফুল প্যাকেজ পাবেন।
ব্যাক্তিগত অভিমত বলতে, আমার কাছে ভালোই লেগেছে। কিছু চরিত্র একদম মনের মতো হয়েছে। যেমন আলি ফজল এর ক্যারেক্টর। কোনো কিছু আগে পরে না ভেবেই হুটহাট কিছু করে বসা। অত্যাধিক সাহস আর বাবলু পন্ডিতে প্লানিং গুলো সুন্দর ছিল। পঙ্কজ ত্রিপাঠি কে কিছু বলার নেই, যেন সবকিছুই জানেন আবার কিছুই জানেন না। তাছাড়া ইন্ড্রাস্টিয়াল দিক বিবেচনা করলে সব মিলিয়ে ভালোই হয়েছে। সিরিজে সবচেয়ে বেশি যেইটা মন কেড়েছে সেইটা হচ্ছে সবার অভিনয়। সবার অভিনয়ই ছিল দেখার মতো। পঙ্কজ ত্রিপাঠিকে সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে তার এক্সপ্রেশন আর বুদ্ধি খাটানোর স্টাইলটা দেখে। যারা গ্যাংস টাইপের সাথে ভায়োলেন্স টাইপ সিরিজ দেখতে পছন্দ করেন তারা অবশ্যই মির্জাপুর ট্রাই করতে পারেন।
This website uses cookies.